ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার: ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন আর নেই। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে গত শুক্রবার থেকে তিনি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ,  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আবদুল মতিনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আবদুল মতিনের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজে মরণোত্তর দেহ দান করায় তার দাফন হবে না।

vasa_motin_bg_465133723
গত ২৫ আগস্ট মোহাম্মদপুরে নিজ বাসায় স্ট্রোক করেন আবদুল মতিন। পরে তাকে প্রথমে মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর ২৬ আগস্ট তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে না পারায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় বলে জানান বিএসএমএমইউর নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন।

মৃত্যুর আগেই ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে মরণোত্তর দেহ ও সন্ধানীকে চক্ষু দান করে গেছেন। গত সোমবার স্ত্রী গুলবদন নেসা আবদুল মতিনের মরণোত্তর দেহদানের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রোববার পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে দেহদানের বিষয়টি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। তিনি আরো জানান, প্রায় ১০ বছর আগেই আবদুল মতিন দেহদানের সিদ্ধান্ত দেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের শিক্ষার্থীদের জন্য মরণোত্তর দেহ দান করেন আবদুল মতিন।

বাঙালির হাজার বছরের গৌরবময় ভাষা আন্দোলনের অন্যতম রূপকার ও সংগ্রামী পুরুষ আবদুল মতিনের জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার ধুবলিয়া গ্রামে। তিনি দার্জিলিং গভার্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে ১৯৪৩ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় এবং ১৯৪৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৪৭ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম ব্যাচে ভর্তি হন। এ সময় তিনি ভর্তি হন আইন অনুষদেও। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে সরকারি পোস্টাল স্ট্যাম্প, পোস্ট কার্ড, মানিঅর্ডার ফরম এবং এনভেলপে বাংলার পরিবর্তে ঊর্দুভাষা ব্যবহার করতে শুরু করলে নিম্ন আয়ের সরকারি চাকরিজীবীরা এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। আবদুল মতিন তাদের দ্বারা ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত হন। বাংলা ভাষার প্রতি শাসকগোষ্ঠীর অবজ্ঞার প্রতিক্রিয়া দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের ভাষা দিবসে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলা হয়।