আত্মগোপনে লতিফ সিদ্দিকী

 

স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে জনরোষ থেকে বাঁচতে নিউইয়র্কে আত্মগোপন করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। স্থানীয় সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা চেষ্টা করেও তার অবস্থান জানতে পারছেন না। তবে তিনি অজ্ঞাত টেলিফোন নম্বর থেকে ঢাকায় বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে সাংবাদিকদের ফোন করে উদ্ভূত পরিস্থিতির খোঁজখবর নিচ্ছেন।

অপরদিকে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী কি নিজেই পরিকল্পিতভাবে সরকারকে গুডবাই জানালেন? কে কাকে গুডবাই জানালো বা জানাতে চলেছে? তিনি ইতিহাসে কিভাবে চিত্রিত হবেন? তিনি ধর্মদ্রোহী? নাকি স্বপক্ষত্যাগী? প্রধানমন্ত্রী তার বিলম্বিত ও সতর্ক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সরকার বেকায়দায় নয়, তিনি নিজে বেকায়দায় পড়েছেন।

লতিফ সিদ্দিকীর মন্তব্যের কোন অংশটি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী কিভাবে নিয়েছেন তা পরিষ্কার হয়নি। কারণটা এখনও তিনি তা উহ্য রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি যা বলেছেন তার দায় সরকার নেবে না। সুতরাং রাষ্ট্রপতি দেশে এলে হয়তো দেখা যাবে মন্ত্রিসভা বিভাগ থেকে কেবিনেট সেক্রেটারি একটি এক বাক্যের প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। তাতে কোনো কারণ উল্লেখ ছাড়া লেখা থাকবে, তাকে অপসারণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে ঢাকায় এক ঘনিষ্ঠজনকে ফোন করেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি ওই ব্যক্তিকে জানান, আজ-কালের মধ্যে তার দেশে ফেরার ইচ্ছে রয়েছে। কথা বলার মাঝে এক পর্যায়ে হতাশাও প্রকাশ করেন তিনি। লতিফ সিদ্দিকী বলেন, দেশে গিয়ে আর কী হবে! মন্ত্রিসভা ও দল থেকে বাদ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এ মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনায়কোচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এদিকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ছেলে অনিক সিদ্দিকী বাপ্পী বাবার এমন লাগামহীন বক্তব্যে মর্মাহত বলে তার এক বন্ধুকে জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বন্ধু জানান, লতিফ সিদ্দিকী তার ছেলে অনিক সিদ্দিকীকে জানিয়েছিলেন, শুক্রবার রাতে তার নিউইয়র্ক থেকে কানাডায় যাওয়ার কথা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি কানাডা গেছেন কি-না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শুক্রবার রাতে ঢাকায় যে ঘনিষ্ঠজনের সাথে লতিফ সিদ্দিকী কথা বলেন, তাকে নিউইয়র্কে অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। বাবার সাথে কথোপকথনের বিষয়ে অনিক সিদ্দিকী বাপ্পী তার বন্ধুকে জানান, বাবার কাছে তার প্রশ্ন ছিলো- কেন তুমি (লতিফ সিদ্দিকী) এ ধরনের কথা বলতে গেলে? জবাবে লতিফ সিদ্দিকী ছেলেকে কোনো সদুত্তর দেননি।

আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর এক ছেলে ও দু মেয়ে। সবার বড় অনিক সিদ্দিকী বাপ্পী ঢাকায় ব্যবসা করেন। বড় মেয়ে রিয়া সিদ্দিকী কানাডার মন্ট্রিলে সরকারি চাকরিজীবী। ছোট মেয়ে প্রীতু সিদ্দিকী শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। তিনি বাবা-মায়ের সাথে ঢাকায় বসবাস করেন। তবে এ মুহূর্তে প্রীতু সিদ্দিকী বাবার সাথে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

ঢাকায় অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, কয়েক দিন আগে লতিফ সিদ্দিকী তাকে ফোন করেন। দেশের বাইরের অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ওই ফোন আসে। অপর প্রান্ত থেকে লতিফ সিদ্দিকী ওই নেতার নাম ধরে বলেন, …আমি দাদা বলছি। এরপর তিনি জানতে চান দেশের কী খবর? কিন্তু আওয়ামী লীগের ওই নেতা কোনো তথ্য না জানিয়ে লতিফ সিদ্দিকীর ফোন কেটে দেন। তারপর ওই নেতাকে তিনি আর ফোন করেননি।

এদিকে ঢাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০ নম্বর হেয়ার রোডে অবস্থিত আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সরকারি বাড়িতে তার পরিবারের কোনো সদস্য এখন অবস্থান করছেন না। শনিবার রাত নয়টার দিকে সেখানে গিয়ে শুধু নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়। এছাড়া খালেক নামে একজন কেয়ারটেকার ছিলেন। খালেক বলেন, মন্ত্রী আমেরিকা যাওয়ার পর পরিবারের কোনো সদস্য এ বাড়িতে আসেননি। তিনি জানান, মন্ত্রীর ছেলে গুলশানে তাদের বাসায় থাকেন। মাঝে মাঝে এখানে আসতেন।