বালিশ চাপা দিয়ে শিশুকন্যা হত্যা করে জিনের দোহাই : সৎ মাকে গণপিটুনি শেষে পুলিশে সোপর্দ

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি বদরগঞ্জে স্বামীর প্রথম পক্ষের সন্তানকে আপদ ভেবে ডাইনি রূপে মৌসুমী : ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর তড়িৎ পদক্ষেপ

 

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গা রোয়াকুলি বদরগঞ্জে দেড় বছর বয়সী শিশুকন্যাকে বালিশ চাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে সৎ মা। শিশুকন্যাকে হত্যা করে জিনে মেরেছে বলে প্রচারের সময় গ্রামবাসী আটক করে তাকে গণধোলাই দিয়েছে। গ্রামবাসী গণধোলাই শেষে তাকে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ সৎ মাকে আটক করে এবং লাশ উদ্বার করে।

গ্রামসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার জেহালা ইউনয়নের রোয়াকুলি বদরগঞ্জের জসিমের সাথে ৩ বছর আগে কুষ্টিয়া কুমারখালীর রুমা খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের দেড় বছর পরেই তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে শিশুকন্যা। নাম রাখা হয় জুই। গত তিন মাস আগে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বার মাতবরদের উপস্থিতিতে জসিম তার স্ত্রী রুমা খাতুনকে তালাক দেন। মাত্র দেড় বছর বয়সী শিশুকন্যা জুইকে রাখতে বাধ্য হন জসিম। গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তায় আলমডাঙ্গা বাবুপাড়ার মোহাম্মদ আলীর মেয়ে মৌসুমীকে (২২) বিয়ে করেন জসিম। শিশুকন্যা জুইকে আপন তথা নিজের কন্যার মতোই দেখবে বলেও বিয়ের সময় প্রতিশ্রুতি আদায় করা হয়। বিয়ের মাস না ঘুরতেই মৌসুমী হলো সৎ কন্যার হত্যাকারী।

পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, গতকাল শুক্রবার সকালে নির্মাণশ্রমিক জসিম বাড়ি থেকে বের হন। মোবাইলফোনের মাধ্যমে তার শিশুকন্যা হত্যার সংবাদ পেয়ে বাড়ি ফেরেন। প্রাণপ্রিয় শিশুকন্যার মৃতদেহ দেখে জসিম দফায় দফায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের মাতম। খুনি সৎ মায়ের ফাঁসির দাবি তোলে গ্রামবাসী। খুনি সৎ মাকে আটক করে গণধোলাই দেয় গ্রামবাসী।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে জসিমের দ্বিতীয় স্ত্রী মৌসুমী নিজ ঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে বাড়ির পাশের প্রতিবেশী মাতিয়ারের মেয়ে লাবনীকে ডাকে। অনেকক্ষণ চুপ থেকে জুই জুই করে কাঁদতে থাকে। লাবনীসহ কয়েকজন প্রতিবেশী ঘরের মধ্যে গিয়ে শিশুকন্যা জুইকে একপেশে হয়ে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে কোলে তুলে নেয়। সৎ মা প্রচার করতে থাকে একটি কালো কাপড় পরা লোক ঘরের মধ্যে ঢুকে জুইকে গলা টিপে মেরে চলে গেলো। তখন প্রতিবেশীরা দেখতে পায় শিশুকন্যার হাত-পা শীতল হয়ে গেছে। মারা গেছে। তাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে প্রতিবেশীরা জুটে এসে সৎ মাকে আটক করে। গণধোলাই শেষে একটি গাছের সাথে বেঁধে রাখে।

প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী লাবনী ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, জুইয়ের সৎ মা মৌসুমীকে আতঙ্কিত দেখে সন্দেহ হলে ঘরের মধ্যে গিয়ে দেখতে পাই জুইকে একপেশে করে শুইয়ে রেখেছে, পাশেই পড়ে রয়েছে বালিশ। শিশুকন্যা জুইকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছে ওর সৎ মা মৌসুমী। এ ব্যাপারে জুইয়ের দাদি বলেন, পাশের বাড়ির ছাদে চালের আটা শুকোতে যাই। বাড়িতে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বাড়িতে এসে দেখি আমার ছেলের বউ আমার একমাত্র নাতনিকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছে। সব সময় সৎ মেয়ে বলে শিশু মেয়েটির ওপর অত্যাচার করে আসছিলো সে। গতকাল বাড়িতে কেউ ছিলো না। সেই সুযোগে তাকে হত্যা করে জিনের দোয়াই দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে।

সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের এসআই পিয়ার আলী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে শিশুকন্যা জুইয়ের সৎ মা মৌসুমীকে আটক করেন। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করে লাশ থানায় নেন। শিশুকন্যা জুইয়ের দাদি বাদী হয়ে সৎ মা মৌসুমীকে আসামি করে একটি হত্যামামলা দায়ের করেছেন। আজ শনিবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে লাশের ময়নাতদন্ত হতে পারে। গ্রামবাসী সৎ মা মৌসুমীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

Leave a comment