চুয়াডাঙ্গা মালোপাড়া সর্বজনীন পূজামণ্ডপের অদূরেই করুণ চিত্র

 

পূজা এলেই স্বাধীনের পায়ে পড়ে শেকল

খাইরুজ্জামান সেতু/ সাইফ জাহান: পূজা এলেই পায়ে শেকল পড়ে ওর। নাম স্বাধীন হলেও তার কিছুই বোঝে না সে। আদরের সন্তান স্বাধীন একদিন সুস্থ হবে- এ আশায় বুক বাধলেও বাবা-মায়ের ইতোমধ্যে কেটে গেছে পনেরোটা বছর। চিকিৎসক অবশ্য আশা ছেড়ে দিয়ে বলেছেন, জন্মগতভাবেই মানসিক প্রতিবন্ধী স্বাধীন অদৌ সুস্থ স্বাভাবিক জীবন পাবে কি না তা বলা কঠিন।

স্বাধীনের বয়স এখন ১৫ বছর। শরীরে বস্ত্র রাখে না। গানের সুর কানে এলেই ছুটে যায় সেখানে। সারা বছর বাড়িতে বাঁধন ছাড়াই রাখা হয়। পূজা এলেই বিগড়ে যায়। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মালোপাড়ার গলিতে যেখানে সর্বজনীন সারদীয় দুর্গা ও কালীমন্দির, তার অদূরেই বাড়ি স্বাধীনের। পূজার ঢাকে কাঠি পড়তেই ছুটে গিয়ে এর ওর চেপে ধরে। এ কারণেই পায়ে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয় স্বাধীনকে। স্বাধীনের বাবা মঙ্গল হালদার এ মন্তব্য করে বললেন, আমরা দরিদ্র। এক সময় মাছ ধরেই চলতে সংসার। এখন মাছ ধরে নয়, বাজার থেকে কিনে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে কোনো রকম সংসার চলে। ওর চিকিৎসা করবো কীভাবে?

‌দু বোনের একমাত্র ভাই স্বাধীন। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট বোন বেড়ে উঠছে। স্বাধীন ছোট বেলা থেকেই মানসিক প্রতিবন্ধী। ঘোরে ফেরে বস্ত্রহীনভাবেই থাকে। বয়স পনেরো হলেও শরীরের দশা দেখে মনে হয় দশ এগারো। দরিদ্র পরিবারের প্রতিবন্ধী ছেলে। ভাতা দেয়া হয়? মঙ্গল হালদার যেন এই প্রথম শুনলেন দেশে প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেয়া হয়। তিনি বললেন, ওসব কিছু কেউ দেয় না। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটানোর পরও একমাত্র ছেলেকে চিকিৎসা করতে কার্পণ্য করিনি। ছোট বেলায় চিকিৎসকেরা বলতেন, চেষ্টা করেন ভালো হয়ে যাবে। আশায় আশায় কেটেছে অনেকগুলো বছর। এখন আর চিকিৎসকের নিকট নেয়ার মতো অবস্থাও যেমন নেই, তেমনই চিকিৎসকও ছেড়ে দিয়েছেন সুস্থ হয়ে ওঠার ভরসা।