আরাফাতে লাখো কণ্ঠে লাব্বায়েক লাব্বায়েক

মাথাভাঙ্গা মনিটর: পাপমুক্তি আর আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় পবিত্র মক্কা নগরীর অদূরে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের মধ্যদিয়ে গতকাল শুক্রবার পবিত্র হজ পালন করেছেন গোটা দুনিয়া থেকে আগত লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। সবার আবেগাপ্লুত কণ্ঠে একই উচ্চারণঃ ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা-শারিকালাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান্ নে’মাতা, লাকা ওয়াল মুলক লাশারিকা লাক’। সবার পরনে শাদা দু খণ্ড বস্ত্র। সবারই দীন-হীন বেশ। নেই আশরাফ-আতরাফ বিভেদের অচলায়তন। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ, রহমতপ্রাপ্তি ও নিজের গুনাহ মাফের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে অশ্রুসিক্ত ফরিয়াদ জানান সমবেত মুসলমানেরা। একে অপরের সাথে পরিচিত হন, কুশল বিনিময় করেন। বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম দৃশ্যেরও অবতারণা হয় গতকাল সেই ময়দানে। বিশ্ব মুসলমানের মহাসম্মেলনের দিন।

গতকাল সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদ মসজিদে নামিরাহ থেকে খুতবা পাঠ ও বয়ান প্রদান করেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ আল আশ্ শেখ (৭৩)। হজের খুতবা শুনে ইমামের পেছনে পরপর জোহর ও আসরের নামাজ আদায়ের পর সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন হাজিরা। সূর্যাস্তের পর আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করে মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা হন হাজিরা। মূলত: ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনকেই হজের দিন বলা হয়।

খুতবায় গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ আল আশ্ শেখ বলেন, অনৈসলামিক শক্তিসমূহ ইসলাম ও মুসলিম দেশসমূহের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে।  ইসলামের মূল ধারা থেকে বিচ্যুত খাওয়ারিজরা এখনো ইসলামের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, ইসলামী শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হওয়াই বিশ্বে মুসলমানদের সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার অন্যতম কারণ। ইসলামের পতাকাকে বিশ্বসভায় ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে মুসলিম দেশসমূহের সংবাদমাধ্যমকে ভূমিকা পালন করা উচিত। তিনি বলেন, নিরীহ মানুষকে হত্যা করা সবচেয়ে বড় নিষ্ঠুরতা। কারণ ইসলাম বলেছে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করা পুরো মানব সমাজকে হত্যার শামিল।

গ্র্যান্ড মুফতি বলেন, মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সমৃদ্ধির জন্য মুসলিম দেশসমূহের নেতাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা উচিত। তিনি বলেন, ইসলাম হচ্ছে সবচেয়ে সহজ ধর্ম। ইসলাম মানবিকতার ধর্ম। এর ভিত্তি সত্য ও ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটি মানুষের পুরো জীবনের নীতিকে ধারণ করে।

মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমাবেশ এবারের হজে ৩০ লাখের বেশি মুসলমান অংশ নিচ্ছেন। গতকাল সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে কেউ গাড়িতে, কেউ পায়ে হেঁটে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওনা হন। সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ হাজিদের আরাফাত ময়দানে আনার জন্য বিপুলসংখ্যক গাড়ির ব্যবস্থা করে। ইহরাম পরা মুসলিমদের এ স্রোত যতোই আরাফাতের নিকটবর্তী হতে থাকে, ততোই তারা ভাবাবেগে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন। তাদের মানস চোখে ভেসে ওঠে সেই আরাফাত ময়দানের ছবি, যেখানে ১ হাজার ৪শ বছর আগে ইসলামের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় ভাষণ দিয়েছিলেন।

Leave a comment