রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের চিনি বাদামী ও গলে যাওয়া এবং রিফাইন চিনি কেনো অতো শাদা- ঝরঝরে? চমকানো তথ্য
হারুন রাজু/হানিফ মণ্ডল: কেরুজসহ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের উৎপাদিত চিনি কেন লাল ও ভেজা এবং বেসরকারি চিনিকলের চিনি কেন শাদা ধবধবে? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই উঠে এসেছে চমকে উঠার মতো তথ্য। উন্মোচিত হয়েছে রহস্য। কেরুজ এমডি এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, রিফাইনিং চিনি মানবদেহের জন্য উপকারী উপাদানই শুধু থাকে না, তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির। সে কারণে বিষ হিসেবে মন্তব্য করেছেন ড. মার্টিন।
চিনিকাল সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞরা বলেছেন চিনি উৎপাদন হয় সাধারণত ৩ প্রক্রিয়ায়। প্রথমটি হচ্ছে র-সুগার, দ্বিতীয়টি -প্লানটেশন হোয়াইট সুগার ও তৃতীয়টি রিফাইন সুগার। বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোতে তৈরি করা হয়ে থাকে হোয়াইট সুগার । প্লানটেশন হোয়াইট সুগারে ভিটামিন ও মিনারেল থাকায় শরীরের জন্য কার্যকর। কিন্তু রিফাইনার চিনিতে মিনারেল ও ভিটামিন থাকে না। কয়েকবার পরিশোধিত করতে করতে শাদা ধবধবে হলেও শরীরের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের কোনো অংশই অবশিষ্ঠ থাকে না। বিশিষ্ট বিজ্ঞানিক ডক্টর মার্টিনের বরাত দিয়ে রিফাইন সুগারকে বিষ হিসেবে আখ্যায়িত করে একটি মাধ্যম জানিয়েছে, এই সুগার খেলে জীবনীশক্তি ভিটামিন ও মিনারেল প্রভৃতি নিঃশেষ করে ফেলে যাতে বিদ্যমান থাকে খাঁটি রিফাইন কার্বহাইড্রেড। শরীরে এই রিফাইন স্টারস ও কার্বোহাইড্রেডকে কাজে লাগাতে পারে না যদি না নিঃশোষিত প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। প্রাকৃতিক এই উপাদানগুলো প্রতিটি উদ্ভিদে সরবরাহ করে যা ওই সব উদ্ভিদে বিরাজমান কার্বো-হাইড্রেটের বিপক্রিয়া ঘটায়। অতিরিক্ত কোনো কার্বো হাইড্রেট সংযোজন করার প্রয়োজন নেই। অসম্পন্ন কার্বো হাইড্রেটের বিপাকের ফলে বিষাক্ত মেটাবোলাইট যেমন, পাইরুভিক এসিড এবং ৫ কার্বণ বিশিষ্ট এবনরমাল সুগার গঠিত হয়। পাইরুবিক এসিড মস্তিষ্কে এবং নার্ভাস সিস্টেমে ও এবনরমাল সুগার লোহিত রক্ত কণিকায় জমা হয়। এই বিষাক্ত মেটাবোলাইট কোষের শোষণে বাধার সৃষ্টি করে। স্বাভাবিক কাজ-কর্ম করতে এবং টিকে থাকার মতো তারা পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন পায় না। এ সময় কিছু কোষ মারা যায়। শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষে কাজ কর্মে বাধা সৃষ্টির কারণে শুরু থেকেই গুরুতর রোগের সৃষ্টি হয়।
ডক্টর মার্টিন জানিয়েছেন, ধর্মীয় মতেও রিফাইন সুগার ইন্ডাস্ট্রি প্রায়ই সুগারকে বিবর্ণ করার জন্য বোনচার ব্যবহার করে। বোনচার হলো প্রাণীর হাড়। যুক্তরাজ্যের প্রায় ২৫ ভাগ সুগার ফ্যাক্টরিতে ফিল্টার হিসেবে বোনচার ব্যবহার করা হয়। ইহুদি ধর্মীয় নেতারা বোনচারের মাধ্যমে সুগার ফিল্টার করা ধর্মীয় পরিপন্থি বলে মনে করেন। অপরদিকে মুসলিমগণও হারাম ঘোষণা করেছেন, কারণ যেসব পশুর হাড় ব্যবহার করা হয় সেগুলো ধর্মীয় রীতি অনুসারে জবাই করা হয় না। তাছাড়া অনেক সময় বোনচার হিসেবে শুকরের হাড় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ কারণেই রিফাইন ও ধবধবে শাদা চিনি মানবদেহের জন্য বিষ ও খাবার অনুপযোগী মনে হয়েছে।
এ বিষয়ে কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবীদ আজিজুর রহমান রাষ্ট্রায়ত্ত্ব চিনিকলের চিনি গলে যাওয়া সম্পর্কে বলেন, প্লানটেশন হোয়াইট সুগারে ভিটামিন ও মিনালে সহনীয় পর্যায়ে থাকায় বায়ুর সংস্পর্শ পেলেই তা ধীরে ধীরে গলতে থাকে এবং রং আস্তে আস্তে বাদামী রং ধারণ করে। অথচ রিফাইন চিনি সাদা ও ঝরঝরে থাকে। কেনো? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়েই উঠে এসেছে চমকে ওঠার মতো তথ্য। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত চিনির তুলনায় কেরুজ উৎপাদিত চিনির গুণগতমান অত্যান্ত ভালো। তাই কেরুজ উৎপাদিত চিনি কিনুন। রাষ্টের মূল্যবান সম্পদ রক্ষা করুন।