ঢাবি ভর্তিযুদ্ধে রংধনুর শিক্ষার্থীদের জয়-জয়কার

এবার ভর্তি পরীক্ষায় কৃতীত্বের স্বাক্ষর রেখেছে ১৩ জন : গতবার ছিলো ১১

 

স্টাফ রিপোর্টার: মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে জেলা উপজেলা কোটা আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে? কোটা দূরাস্ত, সেরাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রাখতে হয়। অন্যবার মেডিকেল, বুয়েটসহ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিযুদ্ধের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। এবার? অন্য সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা। ফলে, সারাদেশের সকল সেরা শিক্ষার্থীরাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তারমধ্যেও চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা অতীতের সকল রেকর্ড ডিঙিয়ে আশার আলো জাগিয়েছে। মেলে ধরেছে চুয়াডাঙ্গার উজ্জ্বলতা। যার আড়ালে আলোকবর্তিকা নিয়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে একের পর এক উদাহরণ সৃষ্টি করে চলেছে, তার নাম ‘রংধনু’।

জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলপ্রকাশ মানেই চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার শিক্ষাসচেতন মানুষের নজর পড়ে, রংধনুর উজ্জ্বলতার দিকে। রংধনু! ছাত্রজীবন থেকেই যে মেধাবী চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার মান বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, সেই আব্দুস সালামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা সহযোগী শিক্ষাদান কেন্দ্রের নাম। আব্দুস সালাম এখন শুধু নাম নয়, তিনি সালাম স্যার হিসেবেই সকলের মাঝে মেলে ধরেছেন। অভিভাবকদের মাঝে তিনি নির্ভরশীলতার প্রতীক। তার শিক্ষাদান কেন্দ্রের কতোজন সেরাদের তালিকায়? সেরাদের তালিকায় অবস্থান করেই শুধু নয়, সারাদেশের সেরাদের মাঝে ক’জন শিক্ষার্থী শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রাখলো? এসব জানতে গিয়েই পরের প্রশ্ন সামনে হাজির, কীভাবে হলো? জবাব দিয়েছেন সালাম স্যার নিজেই।

গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক’ গ ও ঘ ইউনিটে ভর্তির যোগ্যতা অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গার সাকুল্যে ছিলো ১২ জন। এর মধ্যে রংধনুরই ছিলো ১১ জন। এবার? শুধু ক’ ইউনিটেই বাজিমাত! ক ইউনিট তথা বিজ্ঞান অনুষদে চুয়াডাঙ্গার মোট ১০ জন। এর মধ্যে রংধনুর ৭ জন। এরা সকলেই মেধা তালিকায়। অর্থাৎ সরাসরি ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার মান বৃদ্ধির অগ্রযাত্রার পথ কতোটা মসৃণ হয়েছে তারই যেন জানান দিয়েছে। আর ঘ ইউনিটে যে একজন চুয়াডাঙ্গার মুখকে উজ্জ্বল করেছে সেও রংধনুরই শিক্ষার্থী। এছাড়া ক ইউনিটে সুবিধাজনক অপেক্ষমান তালিকায় রয়েছে ৫ জন। সারাদেশে শিক্ষার মান যাচাইয়ের প্রতিযোগিতার পূর্বে চুয়াডাঙ্গার নাম গুনতিতেই তেমন থাকেনি, এক দুজন পেয়েছে কি পায়নি। এখন? একের পর এক সৃষ্টি হচ্ছে উদাহরণ। শিক্ষানুরাগীদের অনেকে এ মন্তব্য করতে গিয়ে কেউ কেউ মনের অজান্তেই উচ্চারণ করছেন ‘জয়তু রংধনু’।

রংধনুর সাফল্য নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে সালাম স্যার বললেন, প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের আন্তরিক শিক্ষাদান তো আছেই। রংধনুর শিক্ষার্থীদের শুধু জিপিও-৫ পাওয়ার মতো করেই গড়ে তোলা হয় না। শিক্ষার্থীদের ৭ম শ্রেণি থেকেই বিশেষ জ্ঞানের দিকে গুরুত্ব দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া হয়। উচ্চ মাধ্যমিক ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে সফলতার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের দিয়েই পরীক্ষা নেয়া হয়। যার প্রশ্নপত্র করা হয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সাথে সঙ্গতি রেখে। যা উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষায় অতোটা গুরুত্ব না পেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে কাজে লাগে। শুধু তাই নয়, ছুটির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে রংধনুর উচ্চ মাধ্যমিক ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাসও নেয়াটাও এ বছর সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।

এবার যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক ইউনিট তথা বিজ্ঞান অনুষদে ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে সেরাদের সেরা তালিকায় তাদের মধ্যে রংধনুর শিক্ষার্থীরা হলো- আলমডাঙ্গা রংপুরের মজনু এলাহীর ছেলে সজিবুল ইসলাম (মেধা তালিকা ৫৮৬), গড়চাপড়ার মিজানুর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ-আল-মামুন (মেধা তালিকা ৫৭৮), সতনাতনপুরের শহিদুল ইসলামের ছেলে ছানাউল্লাহ আশিক (মেধা তালিকা ৮৭৩), দামুড়হুদা দশমীপাড়ার আব্দুল হাই বাচ্চুর ছেলে মিনহাজুল আবেদীন কুয়াশা (মেধা তালিকা ১০৬০), চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালপাড়ার মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে মুন্তাসির মুনেম প্রান্ত (মেধা তালিকা ১৪১১), সিনেমাহলপাড়ার বিশ্বনাথ কর্মকারের মেয়ে অদিতি কর্মকার (মেধা তালিকা ১৪২৫) ও মুক্তিপাড়ার সাইদুর রহমানের মেয়ে সুমাইয়া রহমান (মেধা তালিকা ১৭৬৩)। ঘ ইউনিট থেকে ভর্তি পরিক্ষায় কৃতীত্বের স্বাক্ষর রেখেছে আলমডাঙ্গা গোকুলখালী বাজারের ডা. হায়বাদ আলীর মেয়ে উম্মে সুমাইয়া লাবণী (মেধা তালিকা ৭৮৪)। এদের মধ্যে সজিব রংধনুর উচ্চ মাধ্যমিক ব্যাচে অনিয়মিত থাকলেও দশম শ্রেণির মাধ্যমিক ব্যাচে ছিলো নিয়মিত। মামুন রংধনু থেকে এসএসসিতে কৃতীত্বের স্বাক্ষর রেখে নটরডেম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেছে। বাকি সকলেই অষ্টম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত রংধনুতেই শিক্ষা নিয়েছে।

এছাড়াও সুবিধাজনক অপেক্ষমান তালিকায় আছে- দর্শনা আজিমপুরের ডা. তারিকুল আলমের ছেলে আহানাফ আদিব অর্ক, চুয়াডাঙ্গা গোরস্তানপাড়ার সানোয়ার হোসেন জোয়ার্দ্দারের ছেলে ইসতিয়াক বুলবুল পিয়াস, রেলপাড়ার মুনির উদ্দিন জোয়ার্দ্দারের ছেলে তানভির আঞ্জুম জোয়ার্দ্দার উচ্ছ্বাস, বড়বাজারপাড়ার আব্দুর রহিমের মেয়ে ফারহানা আফরিন লাম ও শেখপাড়ার মামুদ ইকরাম জোয়ার্দ্দারের মেয়ে জারিন তাসনিম মৌ। এদের মধ্যে উচ্ছ্বাস রংধনু’তে অষ্টম শ্রেণি থেকে এসএসসি পর্যন্ত পাড়াশুনা করেছে। বাকি সকলেই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছে।

গত বছর যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিট থেকে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে কৃতীত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলো তারা হলো- আলমডাঙ্গার জেহালার আমিরুল হকের ছেলে ইমজামাম-উল হক তোহা, চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ার আব্দুল মজিদ জোয়ার্দ্দার জিল্লুর মেয়ে নুঝাত তাবাসসুম প্রমি, রেলপাড়ার আব্দুল হক মালিকের ছেলে ফাহিম আল-জুবায়ের মেনন, হানুরবাড়াদীর মিজানুর রহমানের মেয়ে সাফিয়া আক্তার দীপা, হাতিকাটা খেয়াঘাটপাড়ার নজরুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হুসাইন সুজন, চুয়াডাঙ্গা পুরাতন হাসপাতালপাড়ার মিজানুর রহমানের ছেলে শেখ শাহবাজ ও এতিমখানাপাড়ার মুন্সি আলাউদ্দিনের মেয়ে লোমাত আলা প্রভা। গ’ ইউনিট থেকে ভর্তি হয়েছিলো চুয়াডাঙ্গা বাগানপাড়ার প্রশান্ত কুমার দাসের ছেলে প্রবল কুমার দাস ও এতিমখানাপাড়া আখতারুজ্জামানের মেয়ে বিপাশা আজমেরি নিশি। ঘ’ ইউনিট থেকে ভর্তি হয়েছিলো দামুড়হুদা থানাপাড়ার সানোয়ার হোসেনের ছেলে আল জুবায়ের জুয়েল ও চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার মৃত মাবুদ মালিকের মেয়ে ফারজানা তসলিম মৌটুসি।