আসলেই ছিনতাই নাকি আত্মসাতের অপচেষ্টা?
দামুড়হুদার প্রতিনিধি: দামুড়হুদায় প্রকাশ্য দিবালোকে উজ্জ্বল (৩৫) নামের এক গরুব্যবসায়ীর ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিনতাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযোগকারী উজ্জ্বল ও তার দুলাভাই রাকিব (২৭) চুয়াডাঙ্গা ডিবি অফিসে গিয়ে মৌখিকভাবে জানালেও তাদেরকে মামলা করার পরামর্শ দিলে তারা মামলা না করে পালিয়ে যায়। গতকাল রোববার বেলা ১২টার দিকে দর্শনা-চুয়াডাঙ্গা সড়কের ডুগডুগি-কাঁঠালতলার মাঝামাঝি স্থানে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি আসলেই ছিনতাই-নাকি ওই টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা চলছে এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনসহ এলাকার মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার ঝাঝাডাঙ্গা গ্রামের আবুল ফজলের ছেলে গরুব্যবসায়ী উজ্জ্বল তার গরু ব্যবসার ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা চুয়াডাঙ্গা ইসলামী ব্যাংকে জমা দেয়ার জন্য গতকাল রোববার সকালে তার দুলাভাই জীবননগর হরিয়ান নগরের সিরাজুল ইসলামের ছেলে (বর্তমানে ঝাঁজাডাঙ্গার ঘর জামাই) রাকিবের কাছে দেয়। রাকিব উজ্জ্বলের খালাতো ভাই ঝাঁজাডাঙ্গার মৃত হারুনের ছেলে ফরহাদকে (১৫) সাথে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হয়। বেলা ১২টার দিকে দর্শনা-চুয়াডাঙ্গা সড়কের ডুগডুগি-কাঁঠালতলার মাঝামাঝি স্থানে পৌঁছুলে পূর্ব থেকে ওই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন ব্যক্তি তাদের গতিরোধ করে এবং রোডের পাশে নিয়ে যায়। এ সময় রাকিবের কাছে থাকা ৮ লাখ ও ফরহাদের কাছে থাকা ৩০ হাজার মোট ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিনতাই করে মোটরসাইকেলযোগে চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে চলে যায়। রাকিবও ফরহাদকে সাথে নিয়ে তাদের পিছু পিছু চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে রওনা হয়। দুপুর ১টার দিকে রাকিব উজ্জ্বলকে সাথে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা ডিবি অফিসে হাজির হয় এবং তাদের ওই ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিনতাই হয়ে গেছে বলে জানায়। তারা ডিবি পুলিশকে আরো জানায়, যে দুজন টাকা ছিনতাই করেছে তাদের কাছে পিস্তল ছিলো। এরপর ডিবির এসআই ইব্রাহিম আলী, এসআই খালেদুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্সসহ তাদেরকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং থানায় মামলা করার পরামর্শ দেন। তারা প্রথমে মামলা করতে থানায় যাচ্ছি বলে পুলিশকে জানালেও থানায় না এসে চতুর উজ্জ্বল তার দেলাভাই রাকিব ও খালাতো ভাই ফরহাদকে সাথে নিয়ে সটকে পড়ে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ডুগডুগির রমজানের দুছেলে লিটন ও জাহিদ, জয়রামপুরের মজিবারের ছেলে হাফিজ ও তারানীপুরের হারেজের ছেলে রিপন অভিন্ন ভাষায় বলেন, বেলা ১২টার কিছু আগে মোটরসাইকেলযোগে দুজন লোক এসে আমাদের ফার্নিচারের দোকানের অদূরে থামলো। এর কিছুক্ষণ পর রাকিব ও ফরহাদ মোটরসাইকেলযোগে আসে। তারা রাকিবকে ডেকে নিয়ে রাস্তার নিচে নিয়ে গিয়ে কী যেন কথা বলাবলি করলো। এরপর রাস্তার ওপরে থাকা ফরহাদকেও ডাক দিলো। ফরহাদ নিচে নেমে গেলো। এর পরপরই ওই দুজন তাদের মোটরসাইকেলযোগে চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে চলে গেলো। রাকিবও ফরহাদকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে রওনা হলো। ঘণ্টাখানেক পর শুনছি তাদের কাছ থেকে ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়েছে ওই দুজন মোটরসাইকেলআরোহী। তাদের ধারণা যদি টাকা ছিনতাই হতো তাহলে তো তারা চিৎকার-চেঁচামেচি করবে অথবা তাদেরকে মারধর করবে। তাদের মারধরও করলো না কোনো চিল্লাচিল্লিও হলো না অথচ প্রকাশ্য দিবালোকে ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিনতাই হয়ে গেলো এটা অনেকটা সাজানো নাটকের মতো বলেই আমাদের মনে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ডিবির এসআই ইব্রাহিম আলী বলেন, উজ্জ্বল ও রাকিব আমাদের কাছে ঘটনাটি জানানোর পর আমার তাদের সাথে করে ঘটনাস্থলে যায় এবং তাদেরকে থানায় মামলা করারও পরামর্শ দেয়া হয়। প্রথমে মামলা করার কথা বললেও শেষমেষ তারা মামলা না করেই চলে যায়। ঘটনাটি আসলেই ছিনতাই নাকি তৃতীয় পক্ষের টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি জানার পর আমি তাদেরকে থানায় আসতে বলি কিন্ত ওই উজ্জ্বল থানায় আসেনি। তবে ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।