ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নলডাঙ্গা ভুষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শামসুন্নাহার মুক্তা ও সলিমুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সাগরিকা বেগমের বিরুদ্ধে জাল নিবন্ধন দিয়ে চাকরি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর অভিযুক্ত দু শিক্ষকই চাকরি থেকে অব্যহতি দিয়েছেন। এই দু শিক্ষকের একজন ২০১০ ও অপরজন ২০১২ সাল থেকে সরকারি বেতন ভাতা উত্তোলন করছিলেন। ঝিনাইদহ-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার যখন কালীগঞ্জের মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজ ও নলডাঙ্গা ভুষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, ঠিক সেই সময়ে ভুষণ হাইস্কুলের শিক্ষিকা শামসুন্নাহার মুক্তার জাল নিবন্ধনে চাকরির ঘটনা ফাঁস হওয়ায় কালীগঞ্জে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান মেধা ও যোগ্যতা মূল্যায়ন না করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রতিটি স্কুল, কলেজে ও মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ভুয়া নিবন্ধনে চাকরি করছেন। ভুয়া নিবন্ধনে চাকরির করার অভিযোগে ২০১০ সালে মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক শাহানাজ পারভীনের চাকরি চলে যায়। সে সময়েই নিয়োগ পাওয়া নলডাঙ্গা ভুষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শামসুন্নাহার মুক্তা ও সলিমুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সাগরিকা বেগমকে ভুয়া নিবন্ধনে নিয়োগ দেয়া হয় মোটা অংকের টাকা নিয়ে। ভুয়া নিবন্ধনে চাকরির তথ্য ফাঁস হওয়ার পর গত ২৭ সেপ্টেম্বর শামসুন্নাহার মুক্তা চাকরি থেকে রিজাইন দিয়েছেন বলে জানা গেছে। আর শিক্ষিকা সাগরিকা বেগমও গত ১৬ সেপ্টেম্বর চাকরি থেকে অব্যহতি দেন। তারা বর্তমানে বিভিন্ন মহলে দেন দরবার করছেন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, নলডাঙ্গা ভুষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শামসুন্নাহার মুক্তা ২০১১ সালের পহেলা জানুয়ারি রেজাউল করীম রেজার মাধ্যমে সাবেক এমপি আব্দুল মান্নানের হাতে ৪ লাখ টাকা দিয়ে ওই স্কুলে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। সে সময়ে তিনি যে নিবন্ধনে যোগদান করেন তার রোল নং ছিলো ১০৪১০৮৬৭। রেজিস্টেশন নম্বর ছিলো ৮০০০৬৯৮৫/২০০৮। কিন্তু ঝিনাইদহ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে ওই নিবন্ধনের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। শিক্ষিকা শামসুন্নাহার মুক্তা পরবর্তীতে সুকৌশলে মোটা টাকার বিনিময়ে অপর আরেকটি নিবন্ধন ম্যানেজ করে শিক্ষা বিভাগ থেকে বেতন-ভাতার বিল করান। যার রোল নং ১০৪১০০০৭। রেজিস্ট্রেশন নং ৮০০০৬৯৮৫/২০০৮। তিনি যে শিক্ষক নিবন্ধন সনদপত্র দিয়ে বেতন করিয়েছেন তা মূলত অন্য এক জেলার এক পুরুষ ব্যক্তির।
নলডাঙ্গা ভুষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) ওলিয়ার রহমান ভুয়া নিবন্ধনে চাকরির বিষয়ে জানান, আমি দায়িত্ব পাওয়ার আগেই তার ফাইলপত্র গায়েব হয়ে যায়। বর্তমানে শিক্ষিকা শামসুন্নাহার পদত্যাগ করেছেন। তবে কেন ও কি কারণে তিনি চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন তা তিনি জানাতে পারেন নি। তবে শুনেছেন ভুয়া নিবন্ধন এর কারণে নাকি চাকরি ছেড়েছেন। শামসুন্নাহার মুক্তার ব্যাপারে ওলিয়ার রহমান রহস্যজনক কারণে মুখ খুলতে নারাজ।
অপরদিকে সলিমুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিম উদ্দীন বিশ্বাস জানান, শিক্ষিকা সাগরিকা খাতুন ভুয়া নিববন্ধনে চাকরি করেছেন কিনা জানি না। তবে ওই শিক্ষিকা অসুস্থ ও পারিবারিক অসুবিধার কারণ দেখিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর তারিখে চাকরি থেকে রিজাইন দিয়েছেন।
ভুয়া নিবন্ধনে দু শিক্ষিকার চাকরির বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম এ আরিফ সরকার জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার কাছ থেকে তথ্য পেলাম, জাল সার্টিফিকেট আছে নাকি তা সব প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে দেখব। ভুয়া নিবন্ধনে চাকরি করে সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ব্যবস্থা নিবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি। তারা যে ব্যবস্থা নিবে সেটি আমরা ডিজি অফিসকে জানাবো। বর্তমানে এই দু শিক্ষিকা বিভিন্ন স্থানে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্যও সরকারি বেতন ভাতা ও ঈদ উৎসবের টাকা ফেরত না দেয়ার জন্য। এ ব্যাপারে শিক্ষিকা শামসুন্নাহার মুক্তা জানান, আমি স্কুল কর্তৃপক্ষ ও এমপি সাহেবকে বিষয়টি বলেছি। আপনাকে আমি চিনি না, তাই আপনার কাছে এসব বিষয়ে কিছুই বলবো না।