প্রশ্নগুলো হতাশার হলেও বর্তমান দৃশ্যপটে প্রাসঙ্গিক

 

দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুর্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার সুযোগ পান কারা? যারা সেরা। সেরা মেধাবীদের ভর্তিযুদ্ধে যারা প্রযুক্তির মাধ্যমে দুর্নীতির পথে পা বাড়াচ্ছেন তারা কারা? তাদের ওই পথে ধাপিতই বা করছেন কারা? সেরা মেধাবীদের নৈতিকতার স্খলনের দায় কাদের? জাতি অগ্রযাত্রার সোপানে নাকি পতনের কিনারায়? প্রশ্নগুলো পুরোনো এবং হতাশার হলেও বর্তমান দৃশ্যপটে বড্ড প্রাসঙ্গিক।

 

শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় নয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়ও সেলফোন ব্লুটুথ ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে অনিয়ম বেশ কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে। পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশের পরও যে আশাতীত প্রতিকার মিলেছে তা বলা যাবে না। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রযুক্তির মাধ্যমে অসদুপায় অবলম্বন রোধে নানামুখি পদক্ষেপ নিলেও অনিয়ম পুরোপুরি দূর করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করা কঠিন। বেশ কয়েকজন হাতেনাতে ধরা পড়লেও কেউ কেউ যে ধরা পড়েনি তা অস্বীকার করবেন কীভাবে?

 

পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষায় নকল করার প্রবণতা ও প্রযুক্তির ব্যবহারে পরীক্ষার আসনে বসেই উত্তর জানার সুযোগ নেয়া বা দেয়ার মানসিকতা দেশে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দিতে বসেছে। তাছাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগে দক্ষতা তথা মেধার চেয়ে তদবির আর ক্ষমতার জোরই যখন বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তখন নীতি নৈতিকতা প্রসঙ্গটা হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। দাঁড়িয়েছেও। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে যদি অনিয়মটাই প্রাধান্য পায় তা হলে জাতির অগ্রযাত্রা মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

 

একজন স্বচ্ছতার সাথে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন লালন করেন, আর তার পাশের জন যদি যেনতেনভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় অনিয়মের সাথে আপস করে এগিয়ে যান, তা হলে নীতিবান হুমড়ি খেয়ে পড়েন। অনৈতিকতা বেড়ে গেলে নীতি বা আদর্শ সেখানে কি অসহায় হয়ে পড়ে না? পড়ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি যুদ্ধে অনৈতিক পথে পা বাড়ানোর জন্য অবশ্যই শুধু শিক্ষার্থীকে দায়ী করা চলে না। পরিবেশ তথা সমাজও কম দায়ী নয়। নৈতিকতার স্খলন রোধে শুধু পদ্ধতি পরিবর্তন করে হবে না, অন্যায়ের উচিত শিক্ষা অন্যদের সুধরে চলতে সহায়ক হবে।

 

যেকোনো উপায়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস রুখতে হবে। শিক্ষালয়ে ভর্তিতে চুরির পথ বন্ধে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বজনপ্রীতি যেমন ক্ষতিকর, তেমনই চুরির পথ জাতির জন্য আত্মঘাতী। ওই পথে নেয়ার জন্য যারা উদ্বুদ্ধ করছে তাদের সমূলে উৎপাটনে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কারণ ওরা মেধাকে ধ্বংস করছে, পতনের দিকে নিচ্ছে জাতিকে। আজকের শিক্ষার্থী যখন আগামীদিনের কর্ণধার, তখন তাদের সুপথে রাখার দায়িত্ব কার?