নতুন কাস্টমস আইন সংসদে না তোলায় দাতারা অসন্তুষ্ট

স্টাফ রিপোর্টার: এশীয় উন্নয়ন ব্যাংককে (এডিবি) দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জাতীয় সংসদের সদ্যসমাপ্ত চলতি অধিবেশনে নতুন কাস্টমস আইন ২০১৪ বিল আকারে উপস্থাপন করা হয়নি। এতে দাতা সংস্থা আইএমএফ এবং এডিবি অসন্তুষ্ট। তার চায় চলতি বছরেই আইনটি সংসদে পাস করা হোক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটির বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। খসড়া আইনে নীতিগত অনুমোদন দিয়ে সিদ্ধান্ত হয়, আইনটি আরও পর্যালোচনা করে সংশোধনের জন্য মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। এ অবস্থায় আগামী ডিসেম্বরের আগে সংসদে বিল আনা যাবে না বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আর এ নিয়ে এ দুটি দাতা সংস্থার সাথে সরকারের টানাপোড়েনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

১৫ সেপ্টেম্বর খসড়া কাস্টমস আইনটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু মন্ত্রিসভা খসড়া আইনের ওপর অনেকগুলো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা ও পর্যবেক্ষণ রেখে উচ্চ পর্যায়ের কমিটির মাধ্যমে পর্যালোচনাপূর্বক সংশোধিত খসড়া উপস্থাপনের শর্তে আইনটি নীতিগত অনুমোদন করে।
সূত্র জানিয়েছে, ঋণ সহায়তার শর্ত হিসেবে প্রণীত নতুন কাস্টমস আইন, ২০১৪-এর খসড়া ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে- এশীয় উন্নয়ন ব্যাংককে গত জুনে এমন অঙ্গীকার করেছিলো বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু সংসদের সাম্প্রতিক অধিবেশন ১৮ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে। ওই সময়টায় আইনটি উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড স্বীকার করেছে, বিভিন্ন জটিলতায় আরও সময় প্রয়োজন। ডিসেম্বরের আগে কোনোভাবেই তা সংসদে উপস্থাপন সম্ভব নয়।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এনবিআর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং অর্থমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে এ নিয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সাথে যাতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয় সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রদত্ত অঙ্গীকারের সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এডিবির সাথে সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করবে। আইএমএফের সফররত প্রতিনিধি দলকেও বিষয়টি জানানো হবে।

বর্তমানে কার্যকর ১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইনকে আরও যুগোপযোগী ও আধুনিক করে বাংলা ভাষায় কাস্টমস আইন প্রণীত হচ্ছে। দাতা সংস্থা আইএমএফ এবং এডিবির সাথে ঋণ সহায়তার শর্ত হিসেবে তাদের সহায়তা ও অর্থায়নে আইনটি তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকার যখন অঙ্গীকার করে তখন আইনটি ছিলো ইংরেজি ভাষায়। এনবিআরের পরিকল্পনা ছিল জুলাই ২০১৪ সালের মধ্যেই ইংরেজি থেকে বাংলায় খসড়া আইনটি প্রণয়ন সম্ভব হবে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আইনটি বাংলায় রূপান্তর করতে আগস্ট মাস পর্যন্ত সময় লেগেছে। এনবিআরের রোডম্যাপ অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের নীতিগত অনুমোদন নেয়া, আইন মন্ত্রণালয় এবং সংসদবিষয়ক বিভাগ থেকে ভেটিং সম্পন্ন করা হবে। এরপর মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদন নেয়া যাবে। সেপ্টেম্বর মাসেই খসড়া আইনটি বিল আকারে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। এই রোডম্যাপ এডিবিকেও জানানো হয়েছিলো। এডিবি এতে সম্মতি দেয়। কিন্তু বাংলায় রূপান্তরে এক মাস অতিরিক্ত সময় লাগা এবং বিভিন্ন জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে খসড়া আইন মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

সূত্র মতে, কাস্টমস আইনটি সংশোধনে মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একাধিক সচিবের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করা হচ্ছে। কিন্তু মুখ্য সচিব বিদেশে অবস্থান করায় কমিটি গঠন বিলম্বিত হচ্ছে। মুখ্য সচিব ৩০ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরার পর ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজার ছুটি। অক্টোবরে কমিটি গঠন করে এ মাসেই পর্যালোচনা বা সংশোধন করা দুরূহ হবে। এরপর সংশোধিত খসড়া ভেটিং নিয়ে ভেটেড আইনটি আবার মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আইনটি বিল আকারে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন আগামী ডিসেম্বরের আগে সম্ভব নাও হতে পারে বলে মনে করে এনবিআর। আর এ সময়ে সংসদ অধিবেশন না থাকলে তা আরও বিলম্বিত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।