জনশক্তি অপচয় নয় : কাজে লাগাতে পারলেই ধরা দেবে উন্নয়ন

জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দেশে জনশক্তিই বড় সম্পদ। এ সম্পদকে সুহালে কাজে লাগাতে পারলে দেশে যেমন উন্নয়নের বন্যা বয়ে দেয়া সম্ভব, তেমনই কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতা জাতিকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকেই ধাবিত করবে। চরম এ বাস্তবতা সরকার উপলব্ধি করেই জনশক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর নানামুখি উদ্যোগ নিলেও তা যে পর্যাপ্ত নয়, তা বাস্তবতার আলোকে অস্বীকার করার জো নেই।

একের পর এক প্রতারিত, প্রতারক কথিত দালাল চক্রের অপতৎপরতায় প্রাণহানী, প্রবাসে বন্দিসহ নানা নির্যাতনের খবর বিবেকবানদের হতাশই করছে। দেশের বেকার যুবসমাজকে বিদেশের মাটিতে শ্রম বিকানোর পথ যে চাহিদা মতো সুগম করা সম্ভব হয়নি তা বলাই বাহুল্য। তা ছাড়া যারা বিদেশে যেতে আগ্রহী তাদরে মধ্যে সচেতনতারও যথেষ্ট অভাব পদে পদে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তা না হলে তারা কেন দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে? যেহেতু দেশে চাহিদা মতো কর্মসংস্থান গড়ে তোলার বাস্তবমুখি উদ্যোগের যথেষ্ট অভাব, সেহেতু যুবসমাজকে শিল্প উন্নত দেশে পাঠাতে সরকারও আগ্রহী। বিদেশে শ্রম বিকানোর বিনিময়ে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের অর্থনীতিকে শুধু চাঙ্গাই করছে না সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছুতে হলে গণহারে নয়, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করে জনশক্তি রপ্তানি করতে হবে। এ তাগিদ থেকেই জেলায় জেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। জেলায় জেলায় জনশক্তি ব্যুরোর দফতর খোলা হয়েছে। দায়িত্বশীলরা কি যুবসমাজকে সচেতন করতে পারছে? দালালচক্রই বা বেসামাল হচ্ছে কীভাবে? অবশ্যই প্রতারক দালালচক্রের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রবাসে শ্রম বিক্রি করে যারা বৈদেশিক মুদ্রা পাঠায় তারা শুধু তাদের পরিবাকেই সচ্ছল করে না, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তথা উন্নয়নে অবদান রাখে। সে কারণেই নতুন নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টির পাশাপাশি দেশেও কর্মসংস্থান গড়ে তোলার পথে হাঁটতে হবে রাষ্ট্রকে। সরকারকেই জনশক্তি অপচয় রোধে সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নিয়ে কাজে লাগাতে হবে। জনশক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলেই ধরা দেবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন।

বিদেশে যেতে আগ্রহীদের অবশ্য সচেতন হতে হবে। ভ্রমণভিসায় বা চোরাই পথে প্রবাসে পাড়ি জমালে শুধু বিড়ম্বনাই নয়, জীবন বিপন্নের ঝুঁকি পদে পদে। সে কারণেই বিদেশে পাড়ি জমানোর পূর্বেই কার বা কোন সংস্থার মাধ্যমে বিদেশে যাচ্ছি, সেই সংস্থার দেয়া কাজের নিশ্চয়তা পত্র সঠিক কি-না তা যাচাই করেই অর্থলগ্নি প্রয়োজন। অবশ্য এ জন্য জনশক্তি ব্যুরোর মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের অধিক দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।