জমে ওঠেনি ঝিনাইদহে কোরবানির পশুহাট : ভারতীয় গরু আসায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গরুমালিক ও ব্যবসায়ীরা

 

ঝিনাইদহ অফিস : কোরবানি ঈদের প্রস্তুতিপর্বে ঝিনাইদহে এখন হাট পরখ করে গরুর দাম যাচাই করছেন ক্রেতারা। কোরবানির ঈদের বাকি সপ্তাদেড়েক। এখনও জেলার কোরবানির হাটগুলো তেমন একটা জমে ওঠেনি। হাটগুলোতে গরুর সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও ক্রেতা তেমন একটা নেই। তাই বেচা-কেনা হচ্ছে খুব কম। ক্রেতারা বলছেন, কোরবানির গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে গত বছরের চেয়ে বেশি।

ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলায় গরুর হাটের সংখ্যা প্রায় ৩৫টি। ঝিনাইদহ পৌর পশুহাটে প্রতি বৃহস্পতিবার, গোয়ালপাড়ায় শুক্রবার, বৈডাঙ্গায় মঙ্গলবার, হরিণাকুণ্ডুতে শুক্রবার, ভবানিপুরে বৃহস্পতিবার, শৈলকুপায় মঙ্গলাবার, কোটচাঁদপুরে বৃহস্পতিবার, খালিশপুরে শুক্রবার, সরূপপুরে প্রতিদিন, পুড়োপাড়ায় মঙ্গলবার, কালীগঞ্জে প্রতি শুক্রবার ও সোমবার এবং বারোবাজারে শনিবার পশুহাট বসে থাকে। এছাড়া গোয়ালপাড়া, টিকারী, কোলা, কালা, গান্না, বাজারগোপালপুর, নারিকেলবাড়িয়া, লাঙ্গলবাঁধ, ভাটই, মহেশপুরের জলুলী, মাটিলা, যাদবপুর, লেবুতলায় স্থানীয় হাটবারে গরুবেচাকেনা হয়।

এসব হাটে স্বাভাবিকভাবে যে পরিমাণ গরু আমদানি হয় এখন তার চেয়ে বেড়েছে। সে অনুপাতে ক্রেতার সংখ্যা এখনও বাড়েনি। কারণ হিসেবে জানা গেছে, অনেকে আগে-ভাগে কোরবানির গরু কিনতে চান কিছু কম দামে, কিন্তু এবার দাম বেশি হওয়ায় এখনও গরু কেনা শুরু করেননি ক্রেতারা। অন্যদিকে পশু মালিকরা বেশি দাম পাওয়ার আশায় অস্বাভাবিক দাম চেয়ে বসছেন। তাদের মতে, সামনে আরও অনেক হাট পাওয়া যাবে, সে সময় প্রয়োজনে দাম কিছু কমিয়ে সেসব বিক্রি করা হবে। বিক্রেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, ঈদের আগে পশুর দাম কমে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওইসব হাটে গত বছর ঈদের সময় যে গরু ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে এবার ওই একই ধরনের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। একইভাবে গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন দাম চাওয়া হচ্ছে ছাগলেরও। এবার ছাগলের চাহিদা অনেক বেশি।

সদরের গোয়ালপাড়া ও টিকারি হাট ঘুরে দেখা গেছে, ওই হাটে কোরবানির গরুর আমদানি প্রচুর, অন্যান্য হাটবারের তুলনায় অনেক বেশি গরু উঠেছে। কথা হয় রফিকুল, দুলাল, কাশেমসহ বেশ কয়েক গরু বিক্রেতার সাথে। তারা সবাই ছোট কৃষক। ঈদে বেশি দাম পাওয়া যাবে এ আশায় তারা গরুগুলো লালন-পালন করেছেন। তবে তাদের সবার উদ্দেশ্য হলো, আগামী বোরো আবাদ ও কোরবানির ঈদে খরচ মেটানো।

এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে কেউ কেউ আগে থেকেই গরু পুষেছেন বেশি লাভের আশায়। এ ধরনের একজন হচ্ছেন শৈলকুপার ফুলহরি গ্রামের ওসমান গনি। ভাটই হাটে তিনটি গরু নিয়ে এসেছেন। কিন্তু এসব গরু কেনার এখনও ক্রেতা আসেনি। ওসমান গনি জানান, তিনি ৩ বছর ধরে কোরবানির পশুর হাটে বিক্রির জন্য গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসা করছেন। ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ২টি ফ্রিজিয়ান, তিনটি শাহীওয়াল ও নেপালি জাতের বাছুর কিনে এক বছর ধরে পালছেন। ১৫-১৬ মণ মাংস হবে এমন দুটি গরু ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দাম দিয়েছে ব্যাপারিরা। নেপালি জাতের একেকটির দাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা করে উঠছে। তিনি বলেন, ভারতীয় গরু না এলে এবার চড়া দামে বিক্রি করতে পারবেন। তার ৫টি গরু এক বছর পালন করতে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তিনি জানান, গো-খাদ্যের দাম চড়ে যাওয়ায় গরু মোটাতাজাকরণে ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। কোরবানির তিন মাস আগে থেকে গরুর খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। এতে গরু তেজী ও দেখতে সুন্দর হয়।

গরু ব্যবসায়ী রোস্তম ও জয়নাল জানান, হাটে গরু আমদানি বাড়লেও বেচাকেনা শুরু হয়নি। তবে তারা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি। একইভাবে খাসির দামও দ্বিগুণ। এ হাটে দাম দেখে গেলাম। তবে এ দাম কিছুটা কমবে শেষের হাটগুলোতে বলে তারা জানান। আরেক গরু ব্যবসায়ী কিসমত জানান, তিনি ১০টি গরু নিয়ে এসেছেন, একটিও বিক্রি করতে পারেননি। যেসব ক্রেতা আসছেন তারা দাম বলছেন অনেক কম।

ক্রেতা, বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা জানান, এবারের কোরবানির পশুহাট বাজারে ছোট সাইজের গরু ২১ থেকে ৩০ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের গরু ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা এবং বড় সাইজের গরু ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। মধ্যবিত্তরা মাঝারি সাইজের গরুই বেশি নিচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবার ছাগলের দাম কিছুটা বেড়েছে। কোরবানির পশুর হাটে এখন ছোট ছাগল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায়। মাঝারি ছাগল বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায় আর বড় ছাগল বিক্রি হচ্ছে ১০/১৫ হাজার টাকায়।

এদিকে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলার মহেশপুরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে প্রতিদিন আসছে কয়েক হাজার ভারতীয় গরু। বভিন্ন কোরবানির পশুর হাটে ভারতীয় গরু বেশি উঠছে। ফলে সীমান্ত পথে বিপুল সংখ্যাক ভারতীয় গরু অবাধে দেশে আসায় লোকসানের মুখে পড়ছেন স্থানীয় গরুর মালিক ও ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত পথে ভারতীয় গরু আনার ব্যাপারে সরকারি ভাবে কড়াকড়ি আরোপের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে কোরবানির পশু হাট-বাজারকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির দালাল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এরা সাধারণত ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা পয়সা। শুধু তাই নয়, সড়ক-মহাসড়কে সংঘবদ্ধ একটি চক্র ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ে নেমে পড়েছে। অনেক সময় ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে ছিনতাই করে নিচ্ছে টাকা-পয়সা।

এসব বিষয়ে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জানান, সড়ক-মহাসড়কে ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। গরুর ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সব রকম হয়রানি বন্ধে হাটগুলোতে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। গরুর হাটগুলোতে চাঁদা আদায় বা কোনো রকম হয়রানির শিকার হলে হলে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্প অথবা থানাতে অবহিত করতে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।