আজ মহালয়া : দেবীপক্ষের শুভ সূচনা

 

স্টাফ রিপোর্টার: আশ্বিনি পা! শরত্ এলো। শরতের বাতাসে এখন যেন মন্দ্রিত হচ্ছে রূপংদেহি, জয়ংদেহি, যশোদেহি, দ্বিষোজহির সুরের তান। হাওয়ায় এখন পূজার গন্ধ। উমাময় ঠাকুরঘর। এলো শাস্ত্রীয় দেবীপক্ষ। দক্ষিণায়নের দিন। শরতের মেঘ আনাগোনা করলেও আকাশে মাঝে মাঝেই বর্ষার ঘনঘটা। তারই মধ্যে সেজে উঠছে মণ্ডপগুলো। কৈলাশ শিখর থেকে তার আগমনী বার্তায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে উত্সবের রোশনাই। সনাতন হিন্দু বিশ্বাসে-দশভূজা শক্তিরূপেন দুর্গা মণ্ডপে মণ্ডপে অধিষ্ঠান করবেন। শেফালীঝরা শারদ প্রভাতে জলদকণ্ঠে চণ্ডিপাঠ আর পিতৃপক্ষের তর্পণের সমাপন ঘটবে। অতঃপর ঘনঘটার অমাবস্যা তিথিতে প্রাণে দ্যোতনা তুলে ঢাকে পড়বে কাঠি। সৌর আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের নাম মহালয়া। দুর্গোত্সবের তিন পর্ব: মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা। মহালয়ায় পিতৃপক্ষ সাঙ্গ করে দেবীপক্ষের দিকে যাত্রা হয় শুরু।

হিন্দু সংস্কৃতি বিধানে- আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে এবং চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষে দুর্গোত্সব পালন করা যায়। চৈত্র অর্থাত্ বসন্তকালের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা ও আশ্বিন অর্থাত্ শরত্কালের দুর্গাপূজা শারদীয় দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। দুর্গাপূজার প্রচলন নিয়ে হিন্দু পুরানে জানা যায়, ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতায় মাতৃতান্ত্রিক দ্রাবিড় জাতির মধ্যে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন ছিলো। সিন্ধু সভ্যতায় (হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো) দেবীমাতা, ত্রিমস্তক দেবতা, পশুপতি শিবের পূজার প্রচলন ছিলো। দুর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিনী- সে হিসাবে অথবা দেবীমাতা হিসাবে পূজা হতে পারে। তবে কৃত্তিবাসের রামায়নে আছে, শ্রী রাম চন্দ্র কালিদহ সাগর থেকে ১০১টি নীল পদ্ম সংগ্রহ করে সাগর কূলে বসে বসন্তকালে সীতা উদ্ধারের জন্য সর্বপ্রথম শক্তি তথা দুর্গোত্সবের (বাসন্তি পূজা বা অকাল বোধন) আয়োজন করেছিলেন। মারকেন্দীয়া পুরান মতে, চেদী রাজবংশের রাজা সুরাথা খ্রিষ্টের জন্মের ৩০০ বছর আগে কলিঙ্গে (বর্তমানে ওড়িষা) দুশেহিরা নামে দুর্গাপূজার প্রচলন করেছিলো। নেপালে দাশাইন নামে পূজা হয়। যদিও প্রাচীন ওড়িষার সাথে নেপালের পূজার কোনো যোগসূত্র আছে কি-না জানা নেই। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে দুর্গাপূজার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ১৫১০ সালে কুচ বংশের রাজা বিশ্ব সিংহ কুচবিহারে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। আধুনিক দুর্গাপূজার প্রাথমিক ধাপ ১৮ শতকে নানা বাদ্যযন্ত্র প্রয়োগে ব্যক্তিগত, বিশেষ করে জমিদার, বড় ব্যবসায়ী, রাজদরবারের রাজকর্মচারী পর্যায়ে প্রচলন ছিলো। ওড়িষার রামেশ্বরপুরে ৪শ বছর ধরে সম্রাট আকবরের আমল থেকে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে। রামায়ন অনুসারে, অকালে বা অসময়ে দেবীর আগমন বা জাগরণ বলে বসন্তকালের দুর্গা উত্সবকে বাসন্তি পূজা বা অকালবোধনও বলা হয়।