হামলা চালিয়ে বিশ্বমিডিয়ার দৃষ্টি ফেরাতে চেয়েছিলো জঙ্গিরা

স্টাফ রিপোর্টার: রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের (ভিভিআইপি ও ভিআইপি) ব্যক্তিদের গাড়ি বহরের ওপর হামলা ও নাশকতা চালিয়ে বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলো নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ ( জেএমবি)। লক্ষ্য ছিলো জঙ্গিদের ঝিমিয়ে পড়া সদস্যদের উজ্জীবিত করা এবং মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন  আইএস’র ( ইসলামিক স্টেট) জঙ্গিদের সহাভুতি পাওয়া। অপরদিকে বেসরকারি টেলিভিশনের ইসলামিক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যার বিষয়ও জানা ছিলো জেএমবির। গতকাল শুক্রবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিঙে কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি শাখা যৌথ অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার আশুলিয়া ল্যান্ডিং স্টেশন পার্ক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে জেএমবির একাংশের ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদসহ ৭ জঙ্গিকে। অপর সদস্যরা হচ্ছেন নাঈম আলী, সিকান্দার আলী ওরফে নকি, মাহমুদ ইবনে বাশার, মাসুম বিল্লাহ, ফুয়াদ হাসান ও আলী আহম্মদ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক। গ্রেফতারকৃতদের  জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজধানীর তুরাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দায়ের করা দুটি মামলায় গতকাল ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি।

যুগ্মকমিশনার (গোয়েন্দা) মনিরুল ইসলাম জানান, জেএমবির একাংশের প্রধান সাইদুর রহমান ইতঃপূর্বে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তার অবর্তমানে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একাধিক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাসনিম। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ২০টির অধিক মামলা  রয়েছে। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে জারি রয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। তাসনিমের আপন বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল সোহাইল গাজীপুরে আদালতে বোমা হামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। গ্রেফতারকৃত মাহমুদ ইবনে বাশার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সিকান্দার আলী ওরফে নকি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সিকান্দার ব্লগার রাজিব হত্যামামলার সন্দেহের তালিকায় ছিলো। কিন্তু সে সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।

যুগ্মকমিশনার আরো জানান, তাসনিম তার অন্যান্য সহযোগী নিয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করে। আর তাদের এ কাজে সহায়তা দেয় টেকলোলজিতে পারদর্শী নকি ও বাশার।

আইএস জঙ্গিদের সাথে জেএমবির সদস্যদের যোগাযোগ প্রসঙ্গে যুগ্মকমিশনার জানান, গ্রেফতারকৃতরা সিরিয়া ও ইরাকে আইএস জঙ্গিদের সাথে সর্ম্পক স্থাপন করলেও তারা বেশিদূর আগাতে পারেনি। তারা ইন্টারনেটে ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে। তবে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, ইতোমধ্যে তাদের বেশকিছু সদস্য আইএসের পক্ষে যুদ্ধ করতে পার্সপোর্ট সংগ্রহ করেছে। আইএসের কথিত জিহাদে যোগ দিতে যাবে।

যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, টেলিভিশনে ইসলামি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার বিষয়টি জেএমবি জানতো। গ্রেফতারকৃতরা ফারুকী হত্যার ব্যাপারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তা যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের  কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিস্ফোরক তৈরির জন্য ব্যবহৃত ১০ কেজি জেলমিশ্রিত রাসায়নিক, চারটি পিতলের মূর্তি, জেএমবির প্রচারপত্র ও বই।

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিঙে যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপকমিশনার (ডিবি উত্তর) শেখ নাজমুল আলম, উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান, এডিসি (ডিবি উত্তর) আব্দুল আহাদ, সিনিয়র এসি (ডিবি) মুহাম্মদ মিনহাজুল ইসলাম।