মাথাভাঙ্গা মনিটর: স্বাধীন রাষ্ট্র নয়; স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্যের অংশ হিসেবেই থাকুক- এমনটি চায় সংখ্যাগরিষ্ঠ স্কটিশ নাগরিক। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত গণভোটে ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটার স্কটল্যান্ড স্বাধীন হওয়া উচিত নয় বলে রায় দিয়েছে। জয় হয়েছে ‘না’ ভোটের। অন্যদিকে স্বাধীন হওয়া উচিত বা ‘হ্যাঁ’ এর পক্ষে রায় দিয়েছে ৪৪ দশমকি ৭ শতাংশ ভোটার। এ গণভোটে ভোটার উপস্থিতির হার ছিলো ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ। মোট ভোটার ছিলো ৪২ লাখ ৮৩ হাজার ৩২৩ জন। গতকাল শুক্রবার ফল প্রকাশ করা হয়।
স্কটল্যান্ডের মোট ৩২ স্থানীয় কাউন্সিল নিজ নিজ এলাকায় গণভোট পরিচালনা করে। এরমধ্যে ২৮টি কাউন্সিলে ‘না’ ভোট বিজয়ী হয়েছে। মাত্র চারটি কাউন্সিলে স্বাধীনতার পক্ষে (হ্যাঁ ভোট) সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাজ্যের অন্যান্য নির্বাচনগুলোতে বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকা দিনব্যাপি নানা বিশ্লেষণ ও নিজস্ব অভিমত প্রচার করলেও এ গণভোট ছিলো তার সম্পূর্ণ বিপরীত। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে গণমাধ্যমগুলোর কোনো ধরনের বিশ্লেষণধর্মী সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিলো।
স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (এসএনপি) নেতা অ্যালেক্স স্যামন্ড ফলাফল মেনে নিয়ে বলেছেন, প্রায় ১৬ লাখ ভোটার স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়ার ঘটনা প্রমাণ করে স্বাধীন স্কটল্যান্ডের দাবি কতোটা জোরালো হয়েছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকলে ভবিষ্যতে কোনো এক সময় স্কটল্যান্ড স্বাধীন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অন্যদিকে, ‘বেটার টুগেদার’ ক্যাম্পেইনের নেতা আলেস্টেয়ার ডার্লিং ফলাফল উদযাপন করে সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, নিরবতা ভঙ্গ হয়েছে। স্কটিশদের এমন রায়ের ফলে স্বস্তি ফিরে এসেছে ওয়েস্টমিনস্টারে। ফলাফল ঘোষণা মাত্র শুক্রবার ভোরে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেন, অন্তত একটি জেনারেশনের জন্য বিষয়টির সুরাহা হলো। তিনি যুক্তরাজ্যের অখণ্ডতার পক্ষে রায় দেয়ার জন্য স্কটিশদের ধন্যবাদ জানান। এমন রায়ে যুক্তরাজ্য পরিবারের বাকী তিন সদস্য ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের জনগণ অত্যন্ত আনন্দিত বলে মন্তব্য করেন ক্যামেরন।
যুক্তরাজ্যের অখন্ডতা এ যাত্রায় টিকে গেলেও ওয়েস্টমিনস্টারের শাসন ভার আগের মতো থাকবে না। দেশটিতে বড় রকমের সাংবিধানিক পরিবর্তন অনিবার্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গণভোটের আগে ‘না’ ভোট দেয়ার বিনিময়ে স্কটিশ পার্লামেন্টের হাতে ট্যাক্স নির্ধারণ, ট্যাক্ট আদায়, স্বাস্থ্য সেবা এবং নীতি প্রণয়নগত বেশকিছু ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ওয়েস্টমিন্সটারের রাজনীতিকরা। তারা ৯ মাসের মধ্যে সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন। ‘না’ ভোট জয়যুক্ত হওয়ায় এসব প্রতিশ্রুতি পূরণ ওয়েস্টমিন্সটারের রাজনীতিকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।