আশানুরূপ দাম না পেয়ে হতাশ পাটচাষি

চুয়াডাঙ্গায় ১৮ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের পাটের আবাদ

আলম আশরাফ: পাটচাষে খরচ ও ঝামেলা কম হলেও নানা কারণেই কৃষকরা পাটের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। প্রতিবছরই পাটচাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। এক বছর হচ্ছে তো পরের বছর মুখ থুবড়ে পড়ছে। কেন? লোকসান। আশানুরূপ ফলন ও দাম না পেয়ে এবারও হতাশ চুয়াডাঙ্গার পাটচাষিরা।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১৮ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের পাট আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এ বছর হেক্টর প্রতি ১২ বেল করে পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। পাটের রোপণ মরসুমের শুরুতেই খরা ও পোকার আক্রমণে এ বছর পাটের ফলন কম হচ্ছে। চাষিরা ইতোমধ্যে পাট কাটা প্রায় শেষ করেছেন। চাষিদের অধিকাংশই পুকুর, নদী, নালা, ডোবা, খাল, বিলে পাট জাগ দিয়েছেন। বর্তমানে পাটের বাজার মূল্য উৎপাদন খরচের তুলনায় কম হওয়ায় বিঘাপ্রতি ৩/৪ হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে অধিকাংশ পাটচাষির অভিযোগ। ১ বিঘা পাট উৎপাদন করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ১০/১২ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি পাট উৎপাদন হচ্ছে ৭/৮ মণ। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২শ টাকা।

পাটচাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের চেয়ে এবার পাটের ফলন অনেক কম হয়েছে। আবার খরার কারণে খালে-বিলে পানি না থাকায় তারা সময়মতো পাট জাগ দিতে পারছেন না। কোনো কোনো এলাকায় সেচের পানিতে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এতো কিছুর পরও পাট বিক্রি করতে বাজারে গিয়ে তারা হতাশ হচ্ছেন। বাজার মন্দা। পাইকার নেই। চাহিদা না থাকায় কম দামে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচও উঠছে না। বিঘাপ্রতি বোপণ থেকে পাট বিক্রির পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। আর যে পরিমাণ পাটের ফলন হয়েছে তাতে ওই সব চাষির ৩/৪ হাজার টাকা লোকসান হবে।

পাটচাষি মুকুল জানান, যে ৩ বিঘা পাটের আবাদে তার খরচ হয়েছে ৩৩ হাজার টাকা। কিন্তু সে পাট বিক্রি করেছে ৩০ হাজার টাকায়। তবে তার লাভের অংশ বলতে শুধু পাট খড়ি টুকুই তিনি জানান। কিন্তু যেসব চাষি জমি বর্গা ও লিজ নিয়ে পাট আবাদ করেছিলো তাদের লোকসানের অংশ আরো বেশি হবে। পাটচাষি জামাল উদ্দিন বলেন, তিন বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছি। খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে প্রায় কুড়ি হাজার টাকা। গতবার এ জমিতে ৩০ মণ পাট পেয়েছি। এবার সেই জমিতে উৎপাদন হয়েছে ২২ মণ। গতবার পাট দেড় হাজার টাকা মণ বিক্রি করলেও। এবার বিক্রি করেছি এক হাজার দুশ টাকা মণ। তিন বিঘা জমিনের পাট বিক্রি করে ২৫ হাজার টাকা পেয়েছি। জমির দাম ও নিজের শ্রমের দাম ধরলে তিন বিঘা জমিতে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা লোকসান হবে।

এলাকার অধিকাংশ চাষিরা পাট বোপণের আগেই আড়ৎদারদের নিকট থেকে পাটের বাবদ অগ্রিম টাকা নিয়ে থাকে ওই সমস্ত চাষিদের পাট ঘরে তোলার সাথে সাথে আড়ৎদার পাট নিয়ে চলে আসছে। ফলে ওইসব চাষিরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রতিবছর লাভের আশায় সোনালি আঁশ পাট আবাদ করে থাকে। কিন্তু বিগত বেশ কয়েক বছর থেকে পাট আবাদ করে লাভ তো দূরের কথা লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।