কেউ বললেন, কবরে আজাব হচ্ছে তাই দেখে মাদার গাছ কাঁদছে, কেউ বললেন- সৃষ্টিকর্তার অপার কুদরত। নেক নিয়তে পান করলে এবং মাখলে সব রোগ ভালো হয়ে যাবে। এসব প্রচারণায় কেউ পেতেছে বালতি, কেউ ধরেছে বোতল, মগ, গ্লাস। উৎসুক জনতার ভিড় তো লেগেই আছে। ঘটনাটি চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ সোনাতনপুর কবরস্থানের। প্রায় এক যুগ আগে চুয়াডাঙ্গার হানুরবাড়াদিতেও অভিন্ন চিত্র মাথাভাঙ্গার ক্যামেরায় ধরা পড়ে। পত্রিকায় লেখার পর এলাকাবাসীর ঘোর কাটে, ভুল ভাঙে। সচেতনদের অনেকেই নড়েচড়ে বসে।
মাদারগাছ থেকে ফোটা ফোটা বৃষ্টির মতো যা পড়ছে তা আদৌ পানের যোগ্য কি-না তা খতিয়ে দেখা দুরস্ত, বালতি-গামলা-গ্লাস ভরতেই ব্যস্ত। এরা কারা? এলাকার সরলসোজা মানুষ। সচেতন যারা তারা মাদারগাছ থেকে পানির মতো স্বচ্ছ কি এবং কেন পড়ছে তা খতিয়ে দেখলেও তাদের অধিকাংশই মুখ খোলেননি। খোলেন না। কারণ, যেখানে কল্পনাপ্রসূত অলৌকিক কারিশমা পেয়েছে প্রচারণা, সেখানে পোকার মল পড়ছে টাপুরটুপুর তা বলাও অনেকটা ঝুঁকি। এরপরও যারা সচেতন তাদের সরলসোজা মানুষগুলোকে গুজব থেকে রক্ষা করা উচিত নয়?
সমাজে সচেতন অনেকেই রয়েছেন যারা নিজেকে রক্ষায় যতোটা আন্তরিক, সমাজের সরলসোজা মানুষগুলোকে রক্ষায় অতোটা নন। অবশ্য শিক্ষিত হয়েও অনেকে ওরকম পোকা চোখে দেখেন না। তাদের কেউ কেউ যখন গুজবে কান দিয়ে হুচুকে মাতেন তখন তাদের দেখে সরলসোজা সাধারণ মানুষগুলো তাতে মেতে উঠতে উৎসাহিত হন। হচ্ছেনও। সে কারণেই অজ্ঞাত স্থান কোনো মতলববাজের ছড়ানো গুজবে কান দিয়ে বাঁশের কুঞ্চি কেটে পানি ধরে তা পান করতেও দ্বিধা করেন না। জিনে শিশু হত্যা করেছে বলে রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডও বেমালুম ধামাচাপা দেয়ার পাঁয়তারা তো আছেই।
অবশ্যই সমাজ সচেতন হচ্ছে। সমাজে সচেতন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এরপরও সমাজে সচেতনতার আলো কাঙ্ক্ষিত গতিতে ছড়াচ্ছে না। কীভাবে হবে? সচেতন মানুষগুলো সামাজিক দায়িত্ব পালনে গাছাড়া ভাব। সমাজকে সুন্দর করতে হলে সমাজের সচেতন তথা আলোকিত মানুষগুলোকেই অধিক দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। পোকার ত্যাগ করা পানি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। চরম এই সত্য সতর্কবাণী সমাজের সচেতন মানুষগুলো ছাড়া ওদেরকে কে বোঝাবে? কটুক্তির শঙ্কায় কি কোনো সচেতন মানুষ নিজেকে গুটিয়ে রাখে? রাখা উচিত?