ধান্দার ফাঁদ পেতে ভণ্ড সর্পরাজ নিজেই ফান্দে!

দামড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে গিয়ে প্রতারণার ফাঁদ!

 

দামুড়হুদা অফিস/প্রতিনিধি: বহু অফিসারকে ঠকালেও দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঠকাতে পারেনি সর্পরাজ সেজে সর্বরোগের দাওয়ায় দেয়া জিয়ারুল (৩৫)। গতকাল বুধবার দামড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ কয়েকজনের সাথে প্রতারণার অপচেষ্টা চালানোর সময় তিনি হাতেনাতে ধরা পড়েন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। দণ্ডিত কথিত সর্পরাজ জিয়ারুল ঢাকা সাভারের কাঞ্চনতলার মৃত ফলেজ মিয়ার ছেলে বলে পরিচয় দিয়েছেন। এ পরিচয়েই তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তার নিকট থেকে উদ্ধারকৃত তাবিজ কবজ গাছগাছড়া বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টসূত্র জানিয়েছে।

আশ্চর্য্য বিদ্যাশক্তি ও দিব্যজ্ঞানের অধিকারী সেজে ঢাকার সাভার থেকে দামুড়হুদায় দেখাতে এসে সর্পরাজ জিয়ারুল মিয়া গতকাল বুধবার বিকেলে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মো. নুরুল হাফিজের কক্ষে প্রবেশ করে। সর্বরোগের চিকিৎসাদাতা বলে দাবি করে প্রতারণার সময় পুলিশ ডেকে তাকে গ্রেফতার করানো হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে জিয়ারুল দীর্ঘদিন ধরে কীভাবে প্রতারণা করে আসছে তা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষ ঠকানোর চেয়ে অফিসে ঘুরে মওকা মতো পেয়ে গেলেই অনেক টাকা পাওয়া যায়। এ কারণেই গ্রামের বদল অফিসে অফিসে ঘুরে তাবিজকবজ গাছ-গাছড়া দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিই। তার স্বীকারোক্তিসহ উপস্থিত সাক্ষীর জবানবন্দি নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত তার বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ দেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ভণ্ড সর্পরাজ ধান্দার ফাঁদ পেতে নিজেই পড়েছে ফান্দে। ফান্দে পড়িয়া বগা এখন কান্দেরে!

জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কক্ষে গতকাল দুপুরে এ কথিত সর্পরাজ জিয়ারুল ঘোরাঘোরি করেন এবং যাকে তাকে আক্রমণাত্মকভাবে বলেন, আপনি ভুগছেন কঠিন রোগে। তার আচমকা ছুড়ে দেয়া ওই সকল জটিল ও কঠিন রোগের ওষুধ আছে তারই কাছে থাকা ব্যাগে। বিভিন্ন ওষুধি গাছ-গাছালি দ্বারা এ সকল জটিল রোগের চিকিৎসা করে বহু রোগীদের সারিয়ে তোলার সনদও রয়েছে তার কাছে। নিজ অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে এ অভিজ্ঞতা অর্জন করে তিনি ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় ব্যাপক পরিচিত সর্প বিশেষজ্ঞ বলে। তিনি নিজেকে সর্বরোগের বিশেষ কবিরাজ আখ্যায়িত করে দেখাতে থাকেন বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট ধরনা দিয়ে কৌশলে হাতিয়ে নেয়া ভুয়া সনদ। এ কৌশল অবলম্বন করে গতকাল বুধবার দুপুর দুটার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সিএ ফয়জুল ইসলামের কক্ষে প্রবেশ করে তাকে বলেন, আপনি ভুগছেন শনির দোষে। যে ভয়ানক শনি আপনার শরীরের ওপর ভর করে আছে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে তার দেয়া তাবিজ ব্যবহার করতে হবে। এ রোগ নিরাময়ে শতভাগ নিশ্চিত গ্যারান্টির সাধারণ তাবিজের দাম ৩৩১ টাকা, সর্বসিদ্ধি তাবিজের দাম ৫১৩ টাকা আর রাজমোহনী তাবিজের দাম পড়বে ১ হাজার টাকা। সিএ সাহেব তার তাবিজ গ্রহণ বা না ক্রয় করলে এ কথিত কবিরাজ প্রবেশ করেন নাজির হামিদুলের কক্ষে। এখানেও তাবিজ বিক্রি করতে না পেরে এবার তিনি প্রবেশ করেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে এবং নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করেন সর্বরোগের মহাচিকিৎসক বলে।

পুরুষত্বহীনতা, একসিরা, গ্যাস্টিক, বাত, এলার্জি, নিঃসন্তান, ডায়াবেটিকস, স্বামী-স্ত্রীর অমিল, বিভিন্ন বশীকরণসহ জটিল ও কঠিন রোগের এক বিশেষ চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে আখ্যায়িত করে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে দাবি করেন ১টি প্রত্যায়নপত্র। এ এলাকার মানুষের এ সকল জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা দিয়ে সেবা করবেন এ হিসেবে। প্রত্যায়নপত্রটি পাওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দেখাতে থাকেন বিভিন্ন ব্যক্তির দেয়া ভুয়া প্রত্যায়নপত্র। জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত ভারপ্রাপ্ত) মো. নুরুল হাফিজ বিষয়টি অনুধাবন করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ভেষজদ্রব্যকে ভিন্নতর ভেষজ ও প্রস্তুত প্রক্রিয়া হিসেবে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ২৭৬ ধারা মোতাবেক এ কথিত সর্বরোগের চিকিৎসক সর্পরাজ জিয়ারুলকে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। এ সময় তার কাছে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করা পাওয়া যায়, মানুষের হাতের ১টি পাঞ্জা, ছাগল ও হরিণের চামড়ার কয়েকটি টুকরো, হাঁস-মুরগি ও পাখির হাড়, বিভিন্ন গাছের ছালসহ হরেক পদের মাদুলি।