দিন দিন তীব্র হচ্ছে বিদ্যুত সংকট : শহরের চেয়ে গ্রামে সংকট তীব্রতর হয়ে উঠেছে

 

স্টাফ রিপোর্টার: দিন দিন তীব্র হচ্ছে বিদ্যুত সংকট। শহরের চেয়ে গ্রামে এ সংকট আরও বেশি। দিনে ৫ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং সহ্য করতে হচ্ছে গ্রামের মানুষকে। পিকআওয়ারে রাজধানীতেও লোডশেডিং করা হচ্ছে কয়েক ঘণ্টা। চুয়াডাঙ্গাতেও মাঝে মাঝে বিদ্যুতের নাজুক চেহারা ফুটে উঠছে। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর এলাকায় পল্লী বিদ্যুত গ্রাহকদের দুর্দশার শেষ নেই। গত কয়েক দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় ভ্যাপসা গরমে যেমন বিষিয়ে উঠেছে মানুষ, তেমনই বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় জোগানে রয়েছে বিরাট ফারাক। বিতরণ কোম্পানিগুলোর মতে, পিক ও অফপিক আওয়ারে যে পরিমাণ বিদ্যুতের প্রযোজন সেটা তারা পাচ্ছে না। অপরদিকে শহরের কোনো কোনো এলাকায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের জোগান থাকলেও ভঙ্গুর বিতরণ ব্যবস্থার কারণে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রাহক। গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেড়েছে স্বীকার করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, লোডশেডিং হচ্ছে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এর মূল কারণ চাহিদা অনুযায়ী আরইবি বিদ্যুত সরবরাহ পাচ্ছে না। তবে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, গ্যাস সংকটের কারণে ৬০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কম উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া সংস্কার ও মেরামতের কারণেও বেশ কয়েকটি বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ আছে। সব মিলিয়ে চাহিদার তুলনায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি আছে- যা কভার করতে তাদের হাতে লোডশেডিং ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। এছাড়া ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার ও বিতরণ লাইনের কারণেও কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

পিডিবির হিসেবে বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী ঘাটতির ফারাক প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট। এ ঘাটতি মেটানো হচ্ছে লোডশেডিঙের মাধ্যমে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ বিদ্যুত উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ৬০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদনের টার্গেট ছিলো ৬ হাজার ৫১৬ মেগাওয়াট। পিডিবির হিসাবে চাহিদা ছিলো ৪ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। যদিও বেসরকারি হিসেবে ওই দিন বিদ্যুতের মোট চাহিদা ছিলো সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে। যার কারণে বাধ্য হয়ে এই ঘাটতি মেটাতে বারবার লোডশেডিং করতে হয়েছে। একই অবস্থা হয়েছে তার আগের দিনও। যার কারণে বাধ্য হয়ে দিনে-রাতে রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় একাধিকবার লোডশেডিং করতে হচ্ছে। পিডিবির অপর একটি সূত্র জানায়, কিছুদিন ধরে ৬৫১ মেগাওয়াট উৎপাদন কম হচ্ছে গ্যাস সংকটের কারণে। মেরামত ও সংস্কারের জন্যও বন্ধ রয়েছে কয়েকটি বিদ্যুতকেন্দ্র। এতে বাধ্য হয়ে তাদের লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

এদিকে ভালাইপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা ভালাইপুর মোড়সহ আশপাশ এলাকার বিদ্যুতের লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে। লাগাতার এ লোডশেডিঙের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। দিনে ও রাতে আধাঘণ্টা বিদ্যুত থাকলে দু ঘণ্টা লোডশেডিং। এভাবেই চলে সারারাত সারাদিন। ফলে বিরাজ করছে বিদ্যুতের ভয়াবতা। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধের পথে। নিরাপত্তার অভাবে ভালাইপুর মোড়সহ আশেপাশের ব্যবসায়ীরা সন্ধ্যার পর প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। কয়েক মাস আগে বিদ্যুত ব্যবস্থা ভালো থাকলেও বর্তমানে বিদ্যুতের টানা লোডশেডিং কেন দেখা দিচ্ছে তা নিয়ে জনগণের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

এদিকে এলাকাবাসী জানিয়েছে, আগামী দু একদিনের মধ্যে বিদ্যুত সচল না হলে ভালাইপুর মোড়সহ আশপাশে মানববন্ধন ও বিদ্যুতের নাজেহাল অবস্থার পরিত্রাণে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে।

এদিকে এলাকাবাসী জানিয়েছে, আলুকদিয়া বিশ্বাস তেলপাম্প সংলগ্ন লাইনে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুত থাকে।