দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন

 

প্রতিবছর সৌদি আরবের মক্কায় পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হয়। আর স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুসলমানরা হজ পালনের জন্য মক্কায় যান। অথচ পবিত্র ওই ধর্মীয় অনুষ্ঠানটি ঘিরে প্রতি বছরই হাজিদের দুর্ভোগ কিংবা নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়; যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। উল্লেখ্য, প্রতিবছর যেসব হাজি সৌদি আরবে হজের জন্য যান, তাদের সাথে মোনাজ্জেম বা প্রতিনিধি থাকেন। কিন্তু এবারে ভিসা না পেয়ে হাজিদের সাথে এখনো সৌদি আরবে যেতে পারেননি চার শতাধিক এজেন্সির মোনাজ্জেম বা প্রতিনিধি। আর প্রতিবছর এজেন্সির এসব মোনাজ্জেম বা প্রতিনিধিই সৌদি আরবে হাজিদের সার্বিক দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন। ফলে এখন তাদের অনুপস্থিতিতে সেখানে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হাজিরা।

 

সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, অন্যান্য বছর এজেন্সির হয়ে এক বা একাধিক মোনাজ্জেম হাজিদের সার্বিক দেখাশোনা করার জন্য সৌদি আরবের ছয় মাসের মাল্টিপল ভিসা পেতেন। এ সময় একজন মোনাজ্জেম তার প্রয়োজনে যতোবার খুশি ততোবারই সৌদি আরবে যেতে পারতেন। কিন্তু এ বছর থেকে সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনা অনলাইন সিস্টেমে করায়, সৌদি সরকার মোনাজ্জেমদের মাল্টিপল ভিসা না দিয়ে নিয়মিত হজ ভিসা নিয়ে সে দেশে যেতে বলে। আর কারণ হিসেবে দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, মোনাজ্জেমরা হাজিদের কোনো অংশ নন। বরং তারা স্ব স্ব এজেন্সির ব্যবসা দেখতেই সৌদি আরবে যান। তাই তাদের মোনাজ্জেম ভিসার পরিবর্তে শুধু হজ ভিসা নিয়ে যেতে বলেন। অন্যদিকে এটা লক্ষণীয় যে, এ নিয়ম পুরো বিশ্বের জন্যই চালু হলেও বেশি প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের ওপর।

 

ফলে এ পরিস্থিতিতে যে সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এবারে হজ এজেন্সিগুলোর প্রতিনিধি না পেয়ে নতুন হজযাত্রীরা সৌদি আরবে গিয়ে কোনো কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন না। এমনকি থাকা-খাওয়াসহ সবকিছুতেই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। সৌদি আরবে পৌঁছার পর থেকে হজযাত্রীদের অনেক কাজ করতে হয়, সেসব কাজও তারা ঠিকমতো শেষ করতে পারছেন না। এ প্রসঙ্গে আমরা বলতে চাই- মোনাজ্জেমদের জন্য ছয় মাস মেয়াদের মাল্টিপল ভিসা সৌদি সরকার বন্ধ করে দিয়েছে বিধায় এর পরিপ্রেক্ষিতে সমাধানের বিকল্প পথ খুঁজতে হবে। এক্ষেত্রে সৌদি দূতাবাস ও সেখানে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না যে, মোনাজ্জেম বা প্রতিনিধি না থাকায় পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে হাজিরা বিড়ম্বনার শিকার হতে থাকবেন, আর তা সমাধানে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। অভিযোগ আসছে যে, আগের মতো হজ ভিসা বন্ধ করে দিয়ে সৌদি সরকার এ বছর বাংলাদেশি ৮৩৫টি হজ এজেন্সির মোনাজ্জেমদের জন্য একটি করে স্টিকার প্রদান করে। কিন্তু হজের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা এসব ভিসা থেকে দু শতাধিক ভিসা মন্ত্রণালয়ের গঠিত সরকারি টিমের সদস্যদের বণ্টন করেন। আর সেই স্টিকার নিয়েই সৌদি আরবে চলে যান সরকারি প্রতিনিধিরা। অথচ এসব স্টিকার এজেন্সির মোনাজ্জেমদের জন্য দেয়া হয়েছিলো। এমনকি এ সুযোগে হজ ক্যাম্পের কর্মকর্তারাও ভিসার জন্য আবেদন করা এজেন্সিগুলোকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন। এ অভিযোগগুলোর সতত্যা যাচাই করতে হবে। এটা ভুলে যাওয়া যাবে না যে, যেকোনো অনিয়মই দুর্ভোগকে আরো বাড়িয়ে দেয়।

 

সার্বিকভাবে আমরা সরকারকে বলতে চাই- সৃষ্ট সমস্যাগুলো আন্তরিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে সমাধানের লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সৌদি দূতাবাসের সাথে আলোচনাসাপেক্ষে হাজিদের দুর্ভোগ দ্রুত লাঘবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পবিত্র হজ পালন কোনো প্রকার বিড়ম্বনা ছাড়াই শেষ করে হাজিরা ফিরে আসুন, এ প্রত্যাশাই সবার।