বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে শিশু ফারজানাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা : ভগ্নিপতি ও চাচাতো ভাইয়ের দোষ স্বীকার

 

দর্শনা জয়নগরের নিখোঁজের ৪ দিনের মাথায় মসজিদ মক্তব ছাত্রীর গলিত লাশ উদ্ধার : দু সন্দেহভাজনকে ধরেই মিললো হত্যা রহস্য

 

দর্শনা অফিস: দর্শনা জয়নগর মসজিদপাড়ার নিখোঁজ শিশু ফারজানার (৯) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিখোঁজের ৪ দিনের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রাম সংলগ্ন সীমান্ত এলাকার ঝোপের মধ্যে লাশ দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধারের সাথে সাথে শিশুর ভগ্নিপতি ইমান আলী ও চাচাতো ভাই মজিবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই ধর্ষণ শেষে শিশু ফারজানাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশসূত্র বলেছে, গ্রেফতারকৃত দুজন শুধু ধর্ষণ ও হত্যার কথাই স্বীকার করেনি। এরা হত্যার পর দু দিন ধরে লাশ সরিয়ে নেয়ার জন্য কীভাবে চেষ্টা করেছে তারও বর্ণনা দিয়েছে। বলেছে, মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ভগ্নিপতি ইমান আলী ১০ টাকা দিয়ে মজিবুলকে দোকান থেকে বিস্কুট আনার জন্য বলে। শিশু ফারজানাকে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে ইমান আলী নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী মাঠে। সেখানেই তারা দুজন ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায় শিশুকে হত্যা করে। লাশ ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। অপরদিকে ফারজানা বাড়ি না ফিরলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। কবিরাজের কাছে গিয়েও তার সন্ধান জানার ব্যর্থ চেষ্টা চলে।

জানা গেছে, দর্শনা পৌর এলাকার জয়নগর মসজিদপাড়ার দিনমজুর লিয়াকত আলী ওরফে লালার ১০ সন্তানের মধ্যে ৭ম কন্যা ফারজানা ওরফে কুট্টি স্থানীয় মসজিদের মক্তবের ছাত্রী। গত মঙ্গলবার রাত ৮টার থেকে ফারজানাকে খুঁজে পাচ্ছিলো না তার পরিবারের লোকজন। এ সময় চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের বদরগঞ্জ দশমাইল সংলগ্ন মালোপাড়ার আজিল হকের ছেলে ফারজানার সেজ দুলাভাই (ভগ্নিপতি) ইমান আলী জয়নগর অবস্থান করছিলো। ফারজানা নিখোঁজ হলে ইমান আলী তার শ্যালিকাকে খোঁজার অজুহাতে ব্যস্ততা দেখাতে থাকে। আর ফারজানা ওরফে কুট্টির চাচাতো ভাই দর্শনা জয়নগরের মজিবুল আত্মগোপন করে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে জয়নগর চেকপোস্ট সংলগ্ন রেললাইনের ধারে জঙ্গলের মধ্যে ফারজানার গলিত লাশ দেখতে পায় স্থানীয় কৃষকরা। দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা ফারজানার লাশ শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামান, দর্শনা আইসি ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমানসহ সঙ্গীয় ফোর্স। ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করা হয় ইমান আলী ও জয়নগরের বিল্লালের ছেলে মজিবুলকে। দ্রুত আসামি গ্রেফতার করতে সক্ষম হওয়ায় স্থানীয়রা পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছে।

পুলিশ বলেছে, গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা বলেছে, গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ইমান আলী ১০ টাকা দিয়ে দোকান থেকে এক প্যাকেট বিস্কুট আনে মজিবুলকে দিয়ে। বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে ইমান ও মজিবুল ফুঁসলিয়ে ফারজানাকে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী মাঠে। প্রথমে ইমান আলী ও পরে মজিবুল পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে ৯ বছর বয়সী ফারজানাকে। ধর্ষণ শেষে দুজন মিলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ফারজানাকে মাঠেই ফেলে রাখে। পরদিন বুধবার রাতে ধর্ষণের স্থান থেকে লাশ সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। গতকাল দিনভর লাশ সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। ঘটনাস্থলে ইমান আলী ও মজিবুলের রহস্যজনক চলাচলের কারণেই সন্দেহের দানা বাধে। ওসি কামরুজ্জামান আরো বলেছেন, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। একই সাথে ধর্ষণ ও খুন মামলা রুজুর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আজ শুক্রবার ফারজানার মৃতদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত করা হবে। বিকেলে নেয়া হবে জয়নগরে। ময়নাতদন্ত শেষে আজ দাফন সম্পন্ন করা হতে পারে। ফারজানাকে ধর্ষণ শেষে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইমান আলী ও মজিবুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছে এলাকাবাসী। ফারজানার পরিবারে চলছে কান্নার মাতম।