যেভাবে চলছে মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। উপপরিচালকের ব্যক্তিগত হুকুম তামিল করতে গিয়ে দাপ্তরিক কাজকর্ম ঠিকঠাক করতে পারছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সংশ্লিষ্টদের সাথে সর্বদা অসদাচরণ এবং তার স্বজনপ্রীতিসহ নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

বিভিন্ন অভিযোগে জানা গেছে, বর্তমান উপপরিচালক চৈতন্য কুমার দাস গত মার্চে মেহেরপুরে যোগদানের পর তার দপ্তরে শুরু হয় অস্থিরতা ও ক্ষোভ। নতুন কর্মকর্তার কাছ থেকে উপদেশ পরামর্শ পাওয়ার পরিবর্তে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাগ্যে জোটে লাঞ্ছনা ও অসদাচরণ। অকারণেই তিনি অধীনস্থদের গালমন্দ করেন। শুধু তার অধীনস্থদের সাথেই নয় তার দপ্তর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সাথেও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। যোগদানের শুরুতেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন উপপরিচালক চৈতন্য কুমার দাস।

উপপরিচালক দাপ্তরিক কাজের চেয়ে তার বীজ ব্যবসার জন্য অধীনস্থদের বেশি চাপ প্রয়োগ করেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিনি আর.ডি সিডস বীজ কোম্পানির মালিক। যা তার ভাইয়ের বলে তিনি দাবি করেন। যশোরের রুপদিয়া বাজারের আলি সিড ফার্মের ভাড়া করা গুদামে চলে বিভিন্ন ভেজাল বীজের প্যাকিং। যা বিক্রি করতে অধীনস্থদের বাধ্য করেন তিনি। অফিস সময়ে সারাক্ষণ তিনি মোবাইলে বীজের ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। অফিস, ব্যবসা ও ভারতে বসবাসরত ছেলেদের সাথে কথা বলার জন্য ব্যবহার করেন আলাদা আলাদা মোবাইল সিম কার্ড। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে কীভাবে বীজের ব্যবসা করেন তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

শুধু বীজের ব্যবসাই নয় তিনি ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ও বিনা ভাড়ায় দপ্তরে বসবাস করছেন। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার যশোরে নিজ বাসায় যাওয়া-আসার জন্য চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন পর্যন্ত সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। অফিস সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদার অফিসের বৈদ্যুতিক মিটার থেকে নির্মাণকাজে বিদ্যুত ব্যবহার করছেন। ঠিকাদার ওই মিটারের সব বিল নিয়মিত পরিশোধ করেন। অথচ প্রতি মাসে অফিসের বিদ্যুত বিল উত্তোলন করে তিনি পকেটস্থ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

গত ১২ জুন মেহেরপুর সিবিএসডিপি হলরুমে একটি কর্মশালার আয়োজন করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রক্ষিণ খরচ জোগানের কথা বলে তার অধীনস্থ বিভিন্ন দপ্তর থেকে চাঁদা এবং সমন্বিত মুজিবনগর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অর্থ গ্রহণ করেন। ওই প্রকল্প পরিচালক তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কিন্তু অংশ গ্রহণকারীদের কোনো সম্মানী ভাতা প্রদান করা হয়নি উপরন্ত সঙ্কীর্ণ স্থান ও দোতলা টিনের ছাউনি ঘরে কর্মশালায় অংশ নিয়ে অস্বস্থিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন অনেকেই। মাস্টাররোল জমা দিয়ে অংশগ্রহণকারীদের সম্মানীভাতা উত্তোলন করেছেন উপপরিচালক চৈতন্য কুমার দাস। এমন অভিযোগে অংশগ্রহণকারী কয়েকজনের।

এছাড়ও শোকের মাসে বৃক্ষ মেলার আয়োজন করে তিনি বিভিন্ন মহলের কাছে নিন্দিত হয়েছেন। এরপরেও বীজ কীটনাশক ব্যবসায়ী ও বিসিআইসি সার ডিলারদের কাছ থেকে মেলা আয়োজনের নামে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা উত্তোলন করেছেন। যা মেলায় খরচ না করে পকেটস্থ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে নিজের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার জন্য তার দপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) রঘুনাথ করকে বেছে নিয়েছেন। রঘুনাথ করের বাড়ি উপপরিচালের নিজ জেলা যশোরের পার্শ্ববর্তী নড়াইলে। জুনিয়র হয়েও অনেক কর্মকর্তাকে টপকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন উপপরিচালকের আশীর্বাদপুষ্ট রঘুনাথ কর। তিনি দাপ্তরিক কাজ ফেলে সারাক্ষণ উপপরিচালকের সাথেই পড়ে থাকেন।

ভুক্তভোগীদের আরো অভিযোগ, মেহেরপুর জেলায় উল্লেখযোগ্য হারে খাদ্য ফসল উৎপাদন হয়। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু উপপরিচালকের ব্যক্তিগত হুকুম তামিল ও অসাদারণের কারণে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারছে না অধীনস্থরা। কৃষকদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। সবখানেই চলছে অস্থিরতা। প্রতিকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের পাশাপাশি স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি চলছে ভুক্তভোগীদের মাঝে।অভিযোগের বিষয়ে উপপরিচালের মোবাইলফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা।