দুদকের ফাইনাল রিপোর্ট

 

অবশেষেপদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা থেকে রেহাই পেলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দআবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীসহ অভিযুক্তসাত ব্যক্তি। গত বুধবার বিকেলে এক ব্রিফিঙে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)চেয়ারম্যান আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন, পদ্মা সেতু দুর্নীতির ষড়যন্ত্রেরমামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি;এ কারণেসব অভিযুক্তকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য,গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে অভিযোগেরতদন্ত শুরু করেছিল দুদক। এরপর বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আরও তথ্য-উপাত্তপাওয়ার আশায় ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর মামলা করেছিল দুদক। দুদক চেয়ারম্যানেরভাষ্য মতে, দীর্ঘ তদন্তে অভিযোগের প্রমাণাদি না পাওয়ায় মামলায় অভিযুক্তদেরঅব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

দুদক পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্তদেরঅব্যাহতি দিয়েছে, অথচ কানাডার আদালতে এ দুর্নীতি ষড়যন্ত্র মামলার বিচারশুরু হবে আগামী বছরের এপ্রিলে। কানাডার অন্টরিয়র কোর্ট অফ জাস্টিসের আদালতেএ মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের তিনকর্মকর্তা- যথাক্রমে মোহাম্মদ ইসমাইল, রমেশ শাহ ও কেভিন ওয়ালেস। বলাইবাহুল্য,এদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের যথেষ্ট প্রমাণাদি রয়েছে বলেইতাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে কানাডায়। অথচ দুদক এ তিনব্যক্তিকেও অব্যাহতি দিয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি অথবা দুর্নীতিরষড়যন্ত্র যখন জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছিলো,তখনই জনমনে এ সন্দেহের উদ্রেকহয়েছিলোযে, শেষ পর্যন্ত সন্দেহভাজন,বিশেষত সৈয়দ আবুল হোসেনের কিছুই হবেনা। জনমনের সেই সন্দেহই সত্যে রূপ নিলো শেষ পর্যন্ত। কানাডায় পদ্মা সেতুদুর্নীতি নিয়ে যে প্রাক-বিচার শুনানি হয়েছিলো,সেখানে বাংলাদেশের কয়েকজনরাজনীতিক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সেসব জবানবন্দিতে তারা এমন কিছু বলেছেন যাদুর্নীতির তদন্তে সহায়ক হতে পারত। কিন্তু দুদক তাদের জিজ্ঞাসাবাদ না করেইমামলার নিষ্পত্তি করে ফেলেছে। দুদকের এক কমিশনার বলেছেন, রমেশ শাহর যেডায়েরির কথা বলা হয়েছে, তার কোনো অস্তিত্ব নেই। তার মতে,সেটি ডায়েরি নয়, ছিলো নোটপ্যাড। আমাদের কথা হলো,সেটি ডায়েরি, না নোটপ্যাড তা কি খুবইগুরুত্বপূর্ণ?বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান যে সর্বশেষ রিপোর্ট তৈরিকরেছিলেন,সেখানেও নোটপ্যাডের কথাই বলা হয়েছিলো,ডায়েরি নয়। সামগ্রিকঅবস্থাদৃষ্টে এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক, দুদক যে অভিযুক্তদের রেহাই দিল তাছিলো পূর্ব নির্ধারিত।তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কানাডায় মামলা চলছে, অথচদুদক কিছুই খুঁজে পেলো না- এটা বড় বিস্ময় বৈকি। আবুল হোসেনকে অব্যাহতি দিলে আর থাকে কী?বাকিরাও সঙ্গগুণেপার পেয়ে গেলেন! দুদকের বর্তমান সিদ্ধান্তে সংস্থাটি প্রশ্নবিদ্ধ হবেবৈকি। এ সংস্থার পূর্ববর্তী চেয়ারম্যান সংস্থাটিকে নখদন্তহীন ব্যাঘ্রবলেছিলেন। বর্তমান চেয়ারম্যান সম্ভবত তেমনটাই মনে করেন। মামলার আগে দুদকেরপ্রাথমিক তদন্তেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছিলো। নিজেদেরঅবস্থান নিজেরাই উল্টে দিলেন কেন তাহলে দুদক কর্মকর্তারা?দুদকের বর্তমানঅবস্থানের ফলে সংস্থাটি শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও বিতর্কিত হয়েপড়বে, সন্দেহ নেই। এ বিতর্কের অবসান কীভাবে হতে পারে, সেটাই এখন ভাবারবিষয়।