শিশু শিক্ষার্থী ভুন্দি হত্যার রহস্য উন্মোচনের দাবি জোরালো হয়ে উঠছে

 

 

হাড়োকান্দি গ্রামে শ শ ছাত্র-ছাত্রীর মানববন্ধন

হাড়োকান্দি থেকে ফিরে আলম আশরাফ: আলমডাঙ্গার হাড়োকান্দি গ্রামের শিশু ভুন্দির লাশ তুলে ময়নাতদন্তের দাবি তুলেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার এলাকার তিনটি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা সম্মিলিতভাবে ভুন্দি হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে। একই সাথে তারা ভন্দির লাশের ময়নাতদন্তের দাবি তুলেছে। তবে লাশ ময়নাততদন্তের ব্যাপারে পুলিশের অনীহা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গতকাল ভুন্দির পিতা-মাতাকে থানায় ডেকে পুলিশ লিখিত নিয়েছে যে, তারা ভুন্দির লাশের ময়নাতদন্ত চান না। তাদের কোনো অভিযোগ নেই। পুলিশের এ হেন আচরণ দিন দিন রহস্যাবৃত হয়ে উঠছে বলে গ্রামবাসীর অভিযোগ। তারা বলেছে, পুলিশ যদি ভুন্দির মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়, তাহলে গ্রামবাসী স্বউদ্যোগে আদালতে মামলা দায়ের করবে।

            গ্রামসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাস ইউনিয়নের হাড়োকান্দি গ্রামের কৃষক আবুল কাশেমের মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া জান্নাতুল আরা ওরফে ভুন্দি হাড়োকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী (১০)। গ্রামের অনেকেই বলেছেন ভুন্দি ক্লাস ফোরে পড়তো। তার বয়স বারো বছর। ভুন্দি গত ৩১ আগস্ট ভোর ৬টার দিকে গাঁয়ের পাশের নুড়িতলার মাঠে তাল কুড়োতে যায়। এরপর সে আর ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে। এ সময় বাড়ির পার্শ্ববর্তী হাড়োকান্দি কওমি মাদরাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিঙের শিক্ষকের কাছে যান ভুন্দির পরিবারের সদস্যরা। মাদরাসা শিক্ষক কুষ্টিয়া মিরপুরের হাবিবুর রহমান জিন-ভূতের কল্পকাহিনি শুরু করেন। এক পর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা দাবি করে ভুন্দিকে জিনে হত্যা করেছে। পুলিশও এর সমর্থন দেয় বলে গ্রামের অনেকেই জানায়।

            ভুন্দি গত ৩১ আগস্ট সকালে নুড়ি তলার মাঠে তালকুড়োতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরদিন গত ১ সেপ্টেম্বর ওই মাঠের একটি পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। সেসময় মাদরাসার শিক্ষকদের কথামতো পরিবারের সদস্যরা প্রচার করতে থাকে ভুন্দিকে জিনে হত্যা করেছে। আলমডাঙ্গা থানার এসআই জিয়াউল হক জিয়া লাশের সুরোতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন এবং ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেন।            

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে হাড়োকান্দি স্কুলমাঠে ছাত্র-ছাত্রীরা মানববন্ধন করেছে। হাড়োকান্দি-বলেশ্বরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বলেশ্বরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাড়োকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ শ ছাত্র-ছাত্রী দীর্ঘ ১ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেয়। তারা ফেস্টুনে ভুন্দি হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান মেলে ধরে। ভুন্দি হত্যার বিচার দাবি করে তারা। এ সময় বক্তৃতা করেন ভুন্দির স্কুল হাড়োকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মিনাজ উদ্দিন, প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, হাড়োকান্দি-বলেশ্বরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক, দশম শ্রেণির ছাত্রী রিমা ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র তাফসির। বক্তারা ভুন্দি রহস্য উন্মোচনের জন্য পুলিশকে সোচ্চার ও নিরপেক্ষ হওয়ার আহ্বান জানান। যাতে এ হত্যার সাথে যারা জড়িত তারা সহজে পার পেয়ে যেতে না পারে।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হাড়োকান্দির মৃত সন্ন্যাসী কুমার সাধু খার ছেলে ভ্যানচালক মদন কুমার সাধুখা সাংবাদিকদের বলেছেন, রোববার (৩১ আগস্ট-২০১৪) সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে ভুন্দির চাচাতো ভাই কলেজছাত্র জাকির হোসেন ওরফে জান্নাত এবং ভুন্দি দুজন নুড়িতলার মাঠে তালতলায় ছিলো। আমি গিয়ে ওদের দেখার পর তাল কুড়োতে না গিয়ে চলে আসি। এরপর থেকেই ভুন্দিকে আর পাওয়া যায়নি।

            মদনের কথা অস্বীকার করেছে অভিযুক্ত জাকির। সে বলেছে ওইদিন সে তালতলায় যায়নি। এ কথায় সন্দেহ ঘণীভূত হয়। এ ছাড়া জাকিরের কথায় নানা রকম অসঙ্গতি রয়েছে বলে গ্রামের অনেকেই সাংবাদিকদের জানান। তাদের ধারণা ভুন্দিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে পুকুরে ডুবিয়ে রাখা হয়েছিলো।

            গ্রামবাসী জানায়, গতকাল ভুন্দির মা ও বাবাকে আলমডাঙ্গা থানায় ডেকে লিখিত নিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে তাদের কোনো আপত্তি বা অভিযোগ নেই। তারা লাশের ময়নাতদন্ত করাতে চায় না।

            এদিকে, গতকাল হাড়োকান্দি গ্রামের সচেতন মহল বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মামলা করার। যদি পুলিশ লাশের ময়নাতদন্তের কোনো ব্যবস্থা না করে এবং দোষীদের আড়াল করার পাঁয়তারা চালায় তাহলে তারা উদ্যোগী হয়ে আদালতে মামলা করবেন।