আবারও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার

 

আবারওহবিগঞ্জ জেলার সাতছড়ির গহিন অরণ্য থেকে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করাহয়েছে। এবার অভিযান চালিয়ে নয়টি এসএমজি, একটি এমএমজি, একটি বেটাগান, একটি৭.৬২ মিমি অটোরাইফেল, ছয়টি এসএলআর, দুটি এলএমজি, একটি স্নাইপার টেলিস্কোপসাইড ও ২ হাজার ৪০০ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। আর এ অস্ত্রগুলো মাটিরনিচে একটি কন্টেইনারে রাখা ছিলো ফলে অস্ত্রগুলো চকচকে অবস্থায় রয়েছে।

আমরা মনে করি, এ ঘটনা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের এবং আতঙ্কের। কেননা সাম্প্রতিকসময়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন মোতাবেক এটা স্পষ্ট যে, দেশেঅবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার মারাত্মক হারে বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও নাকোথাও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। মানুষ খুন হচ্ছেঅবলীলায়। অথচ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য এ পরিস্থিতি কোনোভাবেইসমর্থনযোগ্য নয়। তথ্য মোতাবেক জানা যাচ্ছে, এবারের অস্ত্রগুলো গত মঙ্গলবারভোরে গহিন অরণ্যের ভেতরে মাটির নিচে একটি কন্টেইনারে পলিথিনে মোড়ানোঅবস্থায় উদ্ধার করা হয়। প্রসঙ্গত, এ গহিন বনেই অভিযান চালিয়ে গত জুনে বিপুলপরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিলো।

শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প র‌্যাবের মিডিয়াউইঙের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন, ১ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত অভিযানেযে অস্ত্র পাওয়া গিয়েছিলো এসব অস্ত্র তারই অংশ। আরো শঙ্কার ব্যাপার হলো, এসব অস্ত্রের সাথে সম্পৃক্ত কাউকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এটানিশ্চিত করেই বলা যায় যে, অস্ত্র আইনে মামলার পর দোষীদের গ্রেফতার করাসম্ভব হলে অস্ত্রগুলোর উৎস, ব্যবহারকারী ও অন্যান্য তথ্য জানা যাবে। আমরাপ্রত্যাশা করি, এ অবৈধ অস্ত্রের সাথে জড়িত চক্রকে শনাক্ত করে আইনের আওতায়আনতে যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে, যা দেশের স্বার্থেই অপরিহার্য।
আমরা বিভিন্ন সময় যখন দেখছি যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপকঅভিযান চলছে, তারপরেও দেশের অভ্যন্তরে অস্ত্রের মজুদ শনাক্ত হচ্ছে; ফলে এপরিস্থিতি শুধু উদ্বেগেরই নয়, বরং একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নেওহুমকিস্বরূপ। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, হবিগঞ্জ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাসার্বিক নিরাপত্তার প্রশ্নে আশঙ্কাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এর আগে ২০০৩ সালেরজুনে বগুড়ার কাহালুতে এক ট্রাক সমপরিমাণ অস্ত্র পাওয়া গিয়েছিলো, আলোচিত ১০ট্রাক অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশের ঘটনাও কারো অজনা নয়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ইঅস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা জানা গেছে, যা একটি দেশ ও মানুষের স্বাভাবিকনিরাপত্তার জন্য নেতিবাচক। ফলে হবিগঞ্জে উদ্ধার করা অস্ত্রগুলোর সাথে এরআগের অস্ত্র উদ্ধার হওয়া ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতা আছে কি-না তাও নিশ্চিত হতেহবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। কেউদেশের ভূখণ্ডকে অবৈধ অস্ত্রের খনি বানাবে এটা কোনোভাবেই হতে পারে না।

সার্বিকভাবে আমরা সরকারকে বলতে চাই-দেশের কোন সীমান্তের কোন স্পট দিয়েঅস্ত্রের চালান ঢোকে তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের অজানা থাকবে এটাপ্রত্যাশিত নয়। এটা বলাই বাহুল্য যে, দেশের অভ্যন্তরে অবৈধ অস্ত্রের মজুদপাওয়া গেলে তা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শৈথিল্যেরই পরিচয় বহন করে, যা কাম্যনয়। আমরা চাই সীমান্তবাহিনীর কঠোর তৎপরতা সার্বক্ষণিক অব্যাহত থাকবে। এছাড়া এসব অবৈধ অস্ত্র যে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ তা বলারঅপেক্ষা রাখে না। ফলে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাকে সহজভাবে দেখারকোনো সুযোগ নেই। আমরা প্রত্যাশা করবো, সরকার দেশব্যাপি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেব্যাপক অভিযান চালাবে এবং সাতছড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্রেরনেপথ্যের কারণ তদন্ত করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে পিছপা হবে না।