বলাহয়,জন্ম-মৃত্যু-বিয়েএ হলো মানুষের নিয়তি। নিয়তির লিখন নাকি খণ্ডানো যায়না! অথচ আমরা জানি,নিয়তি মানুষেরই হাতে। মানুষ নিজেই তার নিয়তিরনির্ধারক। কিন্তু মতলববাজরা ব্যাপকভাবে ভুল ধারণা ছড়িয়ে সর্বনাশ করে চলেছেআমাদের নারী সমাজের। এখনও এর অভিশাপ বয়ে বেড়াচ্ছি আমরা। সংখ্যার দিক থেকেবাল্যবিয়ের শিকার বিশ্বের ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও এ বাস্তবতা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
একটি বেসরকারিসংস্থার গবেষণায় জানা যায়,বর্তমানে দেশে বাল্যবিয়ের হার ৬৬ শতাংশ। আইনতবাল্যবিয়ে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও প্রচলিত কুসংস্কার এবং দারিদ্র্যের কারণেএ কুপ্রথা দোর্দণ্ড প্রতাপে সমাজে বিরাজ করছে।
জাতিসংঘের শিশু তহবিলেরতথ্য অনুযায়ী,বাংলাদেশে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সের এক-তৃতীয়াংশ কিশোরীবাল্যবিয়ের শিকার। সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের ২০১০ সালের প্রতিবেদনঅনুযায়ী,দেশের গ্রামাঞ্চলের ৬৯ শতাংশ কিশোরী ১৮ বছরে পা দেয়ার আগেই তাদেরবিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থা,সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণ থেকেপাওয়া এসব তথ্য এটাই প্রমাণ করছে যে,প্রদীপের নিচে থাকা অন্ধকারের মতোইঅন্ধকার জমাট বেঁধে আছে আমাদের সমাজ জীবনে।
নারী উন্নয়নের সূচকে বাংলাদেশএগিয়ে চলেছে- এমন আত্মতৃপ্তির আড়ালে বিরাজ করছে এক অকথিত অন্ধকার।একটিমেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই,১৮ বছর না হতেই তার কাঁধে বিয়ের বোঝা চাপিয়েদেয়া হচ্ছে। পূর্ণমানবী হওয়ার আগেই তার ওপর বর্তিয়ে দেয়া হচ্ছে মানবউৎপাদনের দায়। এতে যেমন বিপন্ন হচ্ছে সেই অপ্রাপ্ত বয়স্কার জীবন,তেমনিবিপন্ন হচ্ছে তার গর্ভস্থ শিশু। ফলে মাতৃমৃত্যু,শিশুমৃত্যুর হারও কমছে না।বাল্যবিয়েএটি মেয়েকে সারাজীবনের জন্য তার ন্যায্য-সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।বিয়ে বা সাংসারিক জীবনের অর্থ বুঝে ওঠার আগেই তাদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।বঞ্চনা,লাঞ্ছনা তাদের অনেককে শেষ পর্যন্ত আত্মহননের পথেও ঠেলে দিচ্ছে।অর্থাৎ আমরা আমাদের নারীশিশুদের বাল্যবিয়ের মাধ্যমে এক অর্থে জীবন্ত কবরেসমাহিত করছি।
তাই বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের বিকল্প নেই। এসংক্রান্ত আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করে নারীদের রক্ষা করতে হবে।