জীবননগরে পাটের আঁশ ছাড়াতে রিবন রেটিং পদ্ধতি কৃষকের অনাগ্রহ

 

 

জীবননগর ব্যুরো:পুকুর, ডোবা, খাল, বিল, নালায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় জমি থেকে পাট কেটে জাগ দিতে (পচানো) পারছে না জীবননগর উপজেলার কৃষকরা। চলতি বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা রিবন রেটিং মেশিনের সাহায্যে কৃষকদের পাটের আঁশ ছাড়ানোর বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। একেকটি মেশিন গড়ে শতাধিক কৃষকের পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তারপরও জীবননগর উপজেলায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যের আধুনিক রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছাড়ানোয় আগ্রহ কম। জীবননগর উপজেলায় এবার ১ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে পাট কাটার ভরা মরসুম শুরু হলেও এ অঞ্চলের কৃষকরা জাগ দেয়ার পানির অভাবে তা কাটতে পারছেন না। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুর, ডোবা, খাল, বিল, নালায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। পাট পচানোর পানি সঙ্কট, হাতের কাছে বিনামূল্যের আধুনিক রিবন রেটিং মেশিন, এমনকি হাতেকলমে প্রশিক্ষণ থাকার পরও সাধারণ কৃষকরা তা ব্যবহারে অনাগ্রহী কেন?এমন প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উপজেলার দেহাটি গ্রামের কৃষক রফিকউদ্দীন বলেন, রিবন রেটিং মেশিন সহজ ও আধুনিক বলা হলেও এ পদ্ধতি কৃষকদের কাছে খুব ঝামেলার। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রথমত, ওই মেশিন ব্যবহারের জন্য পাট গাছ হতে হয় নির্দিষ্ট বয়সের (১০০ থেকে ১০৫ দিন)। পাটগাছের বয়স বেশি হলে তা থেকে আঁশ ছাড়ানো কষ্টকর। আবার পাটগাছ কম বয়সের হলে রিবন রেটিং মেশিনে আঁশ ছাড়াতে গেলে অর্ধেকের বেশি আঁশ খড়ির সাথে থেকে যায়। অর্থাৎ আঁশ অস্বাভাবিক কম পাওয়া যায় এবং ভালো হয় না। দ্বিতীয়ত, জমি থেকে পাট কাটার পরই রিবনারের মাধ্যমে আঁশ ছাড়াতে হয়। কয়েকদিন বিলম্ব হলেই আঁশ ছাড়ানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। তৃতীয়ত, রিবন রেটিং মেশিনে আঁশ ছাড়াতে অধিক সংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। চতুর্থত, গর্ত তৈরি করে পানি ও সার দেয়ার কাজটিও বেশ ঝামেলার। পঞ্চমত, গর্তে আঁশ ডুবিয়ে রাখলে সেগুলো চুরির আশঙ্কা থাকে। এছাড়া রিবন রেটিং মেশিনের সাহায্যে আঁশ ছাড়ানো পাটখড়ি জ্বালানি হিসেবে তেমন কাজে লাগানো যায় না। অন্যদিকে পাট কাটার পর পুকুর-ডোবায় ইচ্ছামতো সময়ে পাট ফেলে খড়কুটো ও কলাগাছ কিংবা মাটিচাপা দিয়ে ডুবিয়ে রেখে পচানো পাটের আঁশ সহজেই ছাড়িয়ে সুন্দর পাট পাওয়া সম্ভব। এতে নানা ঝামেলা এড়ানোর পাশাপাশি শ্রমিক খরচও হয় অনেক কম। সব মিলিয়ে রিবন রেটিং পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের তেমন আগ্রহ নেই।