অস্বাভাবিক মৃত্যু : যথেষ্ট সন্দেহের পরও পুলিশ কেন নীরব?

 

একা এক জীর্ণ কুঠিরে স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে তার মাসহ নিকটজনেরা দাবি করলেও পুলিশ তা বিশ্বাস করেনি, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেছে। অপর এক স্কুলছাত্রীর লাশ পুকুর থেকে উদ্ধারের পর তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে জোর গুঞ্জন উঠলেও তা কানে নেয়নি পুলিশ। শুধু কী তাই? স্কুলছাত্রীকে জিনে হত্যা করে পুকুরে ফেলেছে বলে তার পরিবারের দাবি। এ দাবি বেমালুম বিশ্বাস করেছে পুলিশ। মৃত্যুরহস্য উন্মোচনে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেনি। দুটি ঘটনা কয়েক দিনের ব্যবধানে এই চুয়াডাঙ্গার জনপদে ঘটেছে। দুটির একটির ক্ষেত্রে পুলিশের দায়িত্বশীলতা প্রশংসার দাবি রাখলেও অপরটির ক্ষেত্রে?

অবশ্যই পুলিশের সকল সদস্য সমান দায়িত্বশীল নন। হনও না। তাই বলে কর্তব্য পালনে অতো ফাঁরাক? জিনে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা করতে পারে? বাস্তব প্রমাণ নেই। তাছাড়া যেকোনো অপমৃত্যুরই প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের বিধান রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার হাড়োকান্দির স্কুলছাত্রীর লাশ বাড়ির পাশের পুকুর থেকে উদ্ধারের পর থেকেই মৃত্যুরহস্য দানা বেধে ওঠে। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুকুরের পানিতে ফেলে রাখা হয়েছে বলে জোর গুঞ্জন ওঠে। এ গুঞ্জনের সত্যতা থাকুক আর না থাকুক, জিনে মারতে পারুক আর না পারুক নূন্যতম সন্দেহ যখন দেখা দেয় তখন ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের পক্ষে পুলিশি মতামত কি আইনসিদ্ধ? অবশ্যই নয়।

প্রশ্ন উঠতেই পারে, স্কুলছাত্রীর পিতা-মাতাসহ নিকটজনদের কারো যখন কোনো অভিযোগ নেই তখন পুলিশের অতো দায় কীসের? পুলিশের দায় আইনের। পিতা-মাতা কি তার সন্তানকে হত্যা করতে পারে? তা যখন পারে না তখন তাদের সব দাবি সব সময় গুরুত্ব বহন করে না। ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ধামাচাপা পড়তে পারে এরকম নূন্যতম সন্দেহ থাকার পরও যে পুলিশ অফিসার ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দানের দিকে ঝুঁকেছেন তার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়। অপরাধ করে পার পাওয়ার কারণেই যে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায় তা নিশ্চয় পুলিশের ওই অফিসার জানেন। তবে কি তিনি জেনেশুনেই স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উন্মোচনে আন্তরিক হননি? তদন্ত দরকার।

অবশ্যই সকল মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চায়। রাষ্ট্র তা নিশ্চিত করতে সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধও বটে। এরপরও নানাভাবেই অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। দুর্ঘটনা, আত্মহত্যাসহ হত্যাকাণ্ড তো দেশে লেগেই রয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যু তথা অপমৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উন্মোচনে তদন্তের বিধান বিদ্যমান। প্রতিটি অস্বাভাবিক মৃত্যুরই প্রয়োজনীয় তদন্ত দরকার। তা না হলে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এরপরও কিছু অপমৃত্যুর ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ পদক্ষেপে শিথিলতা পরিলক্ষিত হয়। এতে যে একেবারেই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা পড়ে না তা হলফ করে বলা যাবে না। যারা হত্যা করে এবং তাদের রক্ষায় যারা সহযোগিতা করে তাদের সকলেরই আইনের আওতায় নেয়া দরকার।