কৌতূহলবশে নিরুদ্দেশ এবং বাড়ি ফিরে অপহরণের গল্প

 

তেরো থেকে ঊনিশ বয়সটা একটু বেশিই কৌতূহল প্রবণ। বড় হয়ে গেছি ভেবে বাধন মুক্ত হতে গিয়ে কেউ কেউ ভুল করে বসে। ভুল সুধরাতে গিয়ে তাদের অনেকেই মিথ্যার আশ্রয় নেয়। নিরুদ্দেশের পর বাড়ি ফিরে অপহরণের গল্প অধিকাংশে ক্ষেত্রে তারই অংশ। তাই বলে সকল ক্ষেত্রেই নিখোঁজকে নিরুদ্দেশ বলে দায় এড়ানো চলে না। কারণ সমাজে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটছে। নিখোঁজ ঘটনাকে নিরুদ্দেশ বলে উদাসীন হলে চরম খেসারত দিতে হতে পারে।

বিদ্যালয়ের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়ে ফেরেনি। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও ওঠেনি। তা হলে গেলো কোথায়? খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে বাড়ি ফিরে বলে, রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে আটকে রেখেছিলো। সুযোগ বুঝে পালিয়ে এসেছি। কেউ কেউ এ কথা বিশ্বাস করলেও অপহরণ ও বন্দি করার গল্পের ছন্দপতন পুলিশের বুঝতে বাকি থাকে না। সর্বক্ষেত্রেই যে এরকম তা নয়। শিশু অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ফাঁদ পাততে গিয়ে অনেকেই হত্যার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে। কেউ কেউ সাজাও পেয়েছে। সম্প্রতি গাজিপুরের এক অপহরকচক্রের তিন জনের মৃত্যুদণ্ডও দিয়েছেন আদালত। অপহৃত অনেকের আর ফিরে পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় কোনো কিশোর নিরুদ্দেশ হলে পিতা-মাতাসহ নিকটজনদের যে কী অবস্থা হয় তা ওরা বুঝবে কীভাবে? বোঝাতে গেলেও উগ্র আচরণে বড় হয়ে গেছে বলে জানান দেয়। সে কারণেই বোঝানোর ক্ষেত্রেও প্রয়োজন কৌশল। কিশোর নিখোঁজ হলে পুলিশেরও তড়িত পদক্ষেপ প্রয়োজন। কিন্তু পুলিশের কী তেমন প্রস্তুত করে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে? পুলিশের অপ্রতুলতা কাটিয়ে তোলার পাশাপাশি সকল বাসস্ট্যান্ড, স্টেশনসহ শহরের বাহির ও প্রবেশপথে নিরাপত্তা ছবি ধারণের ব্যবস্থা স্থাপন সময়ের দাবি। এতে অপরাধীদের যেমন শনাক্ত করা সহজ হবে তেমনই নিরুদ্দেশেরও গতিপথ দ্রুত খুঁজে বের করে তাকে ফেরানোর কাজটি অধিকতর সহজ হবে। যদিও অপহরণ বা নিরুদ্দেশ কোনোটিই কাম্য নয়।

যেহেতু উঠতি বয়স কৌতূহল প্রবণ এবং নিজেকে বড় হয়ে গেছি ভাবতে শুরু করে, সেহেতু সর্বদা বাহুডোরে রাখতে গেলে বিপত্তির শঙ্কা বেড়ে যায়। তা হলে উপায়? বসে বসে চলে সুপথে রাখার মতো দায়িত্বশীল না হলেই সর্বনাশ। ফলে এ বয়সীদের চলাফেরার গতি, কার সাথে কখন মিশছে, অবসরে কী করছে তা নজরে রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। সন্তানের প্রতি কর্তব্য অবহেলা শুধু বিড়ম্বনাই বয়ে আনে না, সন্তানকে বিপথগামী করে। সাজানো স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। বাড়ে দীর্ঘশ্বাস।