স্টাফ রিপোর্টার: মামা-ভাগ্নেদ্বন্দ্বের কারণে মগবাজারে খুন হয়েছেন তিনজন। এদের কেউ ওই মামা-ভাগ্নেরআত্মীয় নন। তবে মামার কাছ থেকে জমিসহ চারটি ঘর কেনায় নিহত রানু আক্তারবৃষ্টির কাল হয়েছে। আর বাকি দুজন কারও সাথে-পাছে ছিলেন না। তারপরওমামা-ভাগ্নের দ্বন্দ্বের বলি হয়েছেন তারা। রেলওয়ের দখলকৃত জমি বিক্রিরটাকার ভাগাভাগি নিয়ে প্রায় ৭ মাস ধরে চলছিলো মামা-ভাগ্নের এই দ্বন্দ্ব। সেইথেকে একে অপরকে দেখে নেয়ার হুমকিও দিচ্ছিলেন। এই ভাগ্নে হচ্ছেন মগবাজারেরমূর্তিমান আতঙ্ক কালা বাবু। আর তার মামা হলেন রনি।
জমি বিক্রির ভাগেরটাকা না পেয়ে গত মার্চ মাসে মামা রনিকে শাসাতে রানুর বাসার গেটে এক রাউন্ডগুলিও করে ভাগ্নে কালা বাবু। এতেও টাকা দিতে রাজি হয়নি রনি। এ ঘটনায় রানুবাদী হয়ে রমনা থানায় মামলাও করেছিলেন। রনির থেকে টাকা না পেয়ে রানুর কাছেজমি বাবদ দু লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে কালা বাবু। আর ওই টাকা না দেয়ায়বৃহস্পতিবার রাতে খুন হন রানুসহ তিনজন। নিহত রানুর স্বজনদের আর্তি- রানুটাকা দিয়ে জমিসহ ঘর কিনেছে। তাকে কেন খুন হতে হলো? কালা বাবু বোঝাপড়া করবেরনির সাথে। রানুকে কেন খুন করলো? রানুর ভাড়াটিয়া বিল্লাল হোসেন ও বিল্লালেরবন্ধু মুন্নাও তো কোনো দোষ করেনি। তাদেরও নির্বিচারে গুলি করেছে কালা বাবুও তার লোকজন। নিহত রানুর ভাই রিপন হোসেন ও শামীম হোসেন ওরফে কালা চাঁনেরসাথে আলাপ করে জানা গেছে উল্লিখিত সব তথ্য।
নিহত তিন পরিবারের সদস্যরাএকে অপরের পরিবারকে ভালো করে জানেন না, চেনেনও না। যদিও একই ঘটনায় নিহতহয়েছেন তিনজন। আর আহত হয়েছেন রানুর ছোট ভাই হৃদয়। আশংকাজনক অবস্থায় তাকেঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে নিহতদের লাশময়নাতদন্তর জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়। মর্গে কান্নায়ভেঙে পড়েন স্বজনরা।
একাধিক এলাকাবাসী জানান, কয়েক বছর আগে মগবাজারেরসোনালীবাগে রেলওয়ের জমি এক সাথে দখল করে কালা বাবু ও রনি। ওই জমির পরিমাণসোয়া এক কাঠা। জমিতে চারটি সেমি পাকা ঘর তোলা হয়। প্রায় ৭ মাস আগে রনি চারলাখ ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে রানু আক্তার ও রানুর ভাই শামীম হোসেনের কাছেবিক্রি করে। রনির ৭৮/২ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকেন রানু-শামীম। সেই সুবাদেরেললাইনের ধারে রেলওয়ের দখলকৃত ওই জমিসহ ঘর কেনে তারা। এই জমি বিক্রি করেপুরো টাকা রনি নিজে নেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কালা বাবু। কারণ ওই জমি রনি-কালাবাবু এক সঙ্গে দখল করেছিল। রনির কাছে জমির বিক্রিত টাকার অর্ধেক ভাগ দাবিকরে বাবু। রনি তা দিতে রাজি হয়নি। এনিয়েই মূলত দ্বন্দ্ব। রনির কাছে টাকারভাগ না পেয়ে রানু আক্তারের কাছে দু লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বাবু।
শুক্রবারদুপুরে নিহত রানুর ভাই শামীম বলেন, বাবু আমার বোনের কাছে দু লাখ টাকাচাঁদা দাবি করেছিলো। বলেছিলো, ওই জমি রনির একা নয়, রনিকে টাকা দিয়েছ, আমাকেওদিতে হবে। দু লাখ টাকা দিলে জমি ভোগ করতে পারবা, নয়লে ঘর থেকে বের হয়েযেতে হবে। এই টাকা রানু তাকে দিতে রাজি হয়নি। রানু তাকে বলেছিলেন, এক জমিকয়বার কিনতে হবে, রনির সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেয়ার জন্য বলেছিলেন রানু। টাকানা পেয়ে রানুকে ঘর ছেড়ে যেতে কয়েকবার হুমকিও দিয়েছে বাবু। একইসঙ্গে রনিকেওশাসিয়েছে। রানুর আরেক ভাই গাড়িচালক রিপন হোসেন জানান, রনি ও রানুর কাছথেকে দাবিকৃত টাকা না পেয়ে রানুকে গুলি করে খুন করেছে বাবু ও তার লোকজন।একই সঙ্গে বিল্লাল ও মুন্নাকে খুন করে। রিপন আরও জানান, কেনার পর চারটি ঘরভেঙে তিনটি ঘর করে ভাড়া দেয়া হয়েছিল। একটি ঘরের ভাড়াটিয়া বিল্লাল। ঘটনারআগে বিল্লালের বন্ধু মুন্না তার কাছে বেড়াতে আসেন।
শুক্রবার সকালে ঢাকামেডিকেল কলেজ হাসপাতলে গিয়ে দেখা যায়, নিহতের স্বজনরা মর্মাহত। কাঁদছেসবাই। নিহত মুন্নার স্ত্রী ইতি আক্তার বলেন, তারা স্বামী-স্ত্রী মালিবাগচৌধুরীপাড়ায় থাকেন। তবে সেপ্টেম্বর মাসে বিল্লালের পাশের রুমে তাদের ভাড়ায়ওঠার কথা। সেকারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুন্না বিল্লালের কাছে বাসাসম্পর্কে জানতে যায়। রাত ৯টার দিকে তিনি (ইতি) খবর পান মুন্না গুর্লিবিদ্ধহয়েছে। রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান। ততোক্ষণে মুন্না মারা গেছেন। ইতি বলেন, আমার স্বামী তো কোনো অন্যায় করেনি। আমার স্বামীকে মেরে আমাকে যারা বিধবাকরেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই। নিহত বিল্লালের মা মমতাজ বেগম বলেন, বিনা দোষেখুন হয়েছে আমার ছেলে। সাধারণ মানুষের আজ নিরপত্তা নেই। তিনি ছেলেহত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।