ঝিনাইদহের ফুরসন্দি ইউনিয়নে হত্যা পরবর্তী ঘটনা৭১ সালের বর্বোরাকেও হার মানিয়েছে-ডিআইজি

 

ঝিনাইদহ অফিস: খুলনা বিভাগের ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান বলেছেন, ঝিনাইদহের ফুরসন্দি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে হত্যা পরবর্তী যে লুটপাট, ভাঙচুর ও অরাজকতা চালানো হয়েছে তা ১৯৭১ সালের পাকবাহিনীর বর্বোরতাকেও হার মানিয়েছে। তিনি বলেন, খুলনার ডিআইজি হিসেবে এই লজ্জা আমারও। এ ধরনের ঘটনা পাকিস্থানী বাহিনীও ঘটায়নি। এই সংহতি সমাবেশের পর আবারো যদি ফুরসন্দি ইউনিয়নে কোনো রকমের বিবাদ সৃষ্টি হয় তবে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। ডিআইজি বলেন, আমরা দেশে জঙ্গিবাদ নির্মূল করেছে, জামায়াত-শিবিরের নাশকতাও আমরা দমন করেছি। অথচ ঝিনাইদহের ছোট একটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দু নেতার দ্বন্দ্ব থামাতে পারেনি পুলিশ। তিনি ইউনিয়নবাসীকে শান্ত পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান। ডিআইজি গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ধননঞ্জয়পুর হাইস্কুল মাঠে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময়সভায় বক্তৃতাদানকালে এ কথা বলেন।

ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ফুরসন্দি ইউনিয়নে গত ১০ জুন আওয়ামী লীগকর্মী সিরাজুল ইসলাম রিন্টু মুন্সী হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে অগনিত বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এরপর ধারাবাহিকভাবে চলে বাড়ি-ঘর ভাঙচুরসহ প্রতিপক্ষকে উচ্ছেদ করার ঘটনা। ফুরসন্দি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের কাঁচা ও পাকা বাড়ি-ঘর ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হলে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ফুরসন্দি ইউনিয়নের ঘটনায় আমি লজ্জিত। জেলা প্রশাসক হিসেবে এই দায় আমারও। আমরা এই ঘটনার পর আপোষরফার চেষ্টা করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে সফল হয়নি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার, ফুরসন্দি ইউনিয়নে বিবাদ সৃষ্টির দুই অনুঘটক ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শিকদার, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালেক, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ, ঘোড়শাল ইউপি চেয়ারম্যান পারভেজ মাসুদ লিল্টন, স্কুল শিক্ষক মুকুল, লিটন বিশ্বাস, টিপু সুলতান, আলম মুন্সি, মাড়ন্দি গ্রামের তরিকুল ইসলাম ও আলতাফ হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। ডিআইজি আব্দুল মালেক ও চেয়ারম্যান শহিদ শিকদারকে ধিক্কার জানিয়ে বলেন, তাদের কারণে ফুরসন্দি ইউনিয়নের গ্রামগুলোর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের সহায় সম্পদ নষ্ট হয়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে মানুষ হয়েছে ঘরছাড়া।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ফুরসন্দি গ্রামের সবুর মোল্লা, আকবর মোল্লা, ফুল মিয়া, বাবর আলী, কালাম মোল্লা ও লক্ষ্মীপুর গ্রামের মসলেম, ফসিয়ার, হোসেন বিশ্বাস, মহিউদ্দিনসহ অনেক পরিবারের বাড়ি ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। শুধু বাড়ি-ঘর ভাঙচুর নয় ওই সকল বাড়ির মূল্যবান গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। বাড়ির টিউবওয়েলগুলো লুট করা হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান আ.লীগ নেতা শহিদ শিকদার ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আ.লীগ নেতা আব্দুল মালেকের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। প্রায়ই তাদের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। হামলা-পাল্টা হামলায় এ পর্যন্ত দু শতাধিক বাড়ি-ঘর ভাঙচুর হয়েছে। উভয়পক্ষের বাড়ি-ঘর লুটপাটে ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৫ কোটি টাকা। এই বিবাদে চার জন খুনসহ বহু মানুষ আহত হয়েছে। দু নেতার দ্বন্দ্ব থামাতে এর আগেও পুলিশের উদ্যোগে সমঝোতা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সরকারি দল করার কারণে পুলিশ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে ফলে সফল হতে পারেনি। ডিআইজির সমঝোতা বৈঠকের পর কতো দিন ফুনসিন্দ ইউনিয়ন শান্ত থাকে সেটাই দেখার বিষয়।