প্রতিবেশীর কোদালের কোপে যুবক নিহত

মেহেরপুরের পাটকেলপোতায় পূর্ব বিরোধের জের

 

বারাদী প্রতিনিধি: কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আব্দুল জব্বার নামের এক যুবককে (২২) নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আলাই মিয়া ও তার পিতা তাহাজ উদ্দীন এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মেহেরপুর সদর উপজেলার পাটকেলপোতা গ্রামে এ নির্মম ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন জাব্বারুরের মা রাবেয়া খাতুন (৪৮) ও বড় ভাই হাবিবুর রহমান (২৬)। জাব্বারুল ইসলাম ওই গ্রামের রবগুল আলীর ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রবগুল আলীর বাড়ির পার্শ্ববর্তী বারাদী বীজ উৎপাদন খামারে মাটি কেটে গরু রাখার স্থান তৈরি করছিলেন আলাই মিস্ত্রি ও তার পিতা তাহাজ উদ্দীন। এ নিয়ে জাব্বারুলের সাথে তাদের বিরোধ বাধে। তাদের মধ্যে চরম বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। উত্তেজিত আলাই ও তার পিতা তাহাজ উদ্দীন কোদাল দিয়ে জাব্বারুলকে কোপ দেয়। মাথায় এলোপাতাড়ি কোপে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জাব্বারুল। তাকে রক্ষায় ছুটে আসেন মা রাবেয়া খাতুন ও ভাই হাবিবুর। তাদেরকেও কোদাল দিয়ে কোপ দেয়া হয়। স্থানীয় লোকজন আহত দু ভাই ও তাদের মাকে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করে। রাবেয়া ও হাবিবুরকে ভর্তি রেখে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাব্বারুলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক। রাজশাহী নেয়ার পথে পাবনার দাসুরিয়া নামক স্থানে পৌঁছুলে জাব্বারুল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরে মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। ছেলের মৃত্যুর খবরে পিতা-মাতাসহ পরিবারে শুরু হয় শোকের মাতম। শোকের ছায়া ছড়িয়ে পড়ে স্বজনসহ গ্রামবাসীর মাঝে।

এদিকে ঘটনার পরপরই গ্রাম থেকে সটকে পড়ে অভিযুক্ত খুনি আলাই ও তাহাজ উদ্দীন। খবর পেয়ে সদর থানার এসআই কামাল হোসেন ও বারাদী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এএসাই আক্তারুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন সাপেক্ষে ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালমর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হলে গত রাত ১০টার দিকে জানাজা শেষে গ্রাম্যকরবস্থানে দাফন করা হয়।

স্থানীয়সূত্রে আরো জানা গেছে, বারাদী বীজ উৎপাদন খামারের মাটি কাটাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাহাজ উদ্দীন ও রবগুল আলীর পরিবারের মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরে মৃদু বিরোধ চলে আসছিলো। এরই জের ধরে আলাই ও তার পিতা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গতকাল খামারে মাটি কাটতে যায়। জাব্বারুলকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। আলাই ও তাহাজ উদ্দীনকে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।

মেহেরপুর সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান জানান, জাব্বারুলের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপন করেছে অভিযুক্ত খুনি আলাই ও তাহাজ উদ্দীন। তবে তাদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আজ পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় হত্যামামলা দায়ের করা হবে।

নিহতের পারিবারিক পরিচয়: পাটকেলপোতা গ্রামের কৃষক রবগুল আলীর তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে নিহত জাব্বারুল ছোট। মেয়ে বিবাহিতা। তিন ছেলের কেউ বিয়ে করেননি। কৃষিকাজ করে তাদের সংসার বেশ সুখেই কাটছিলো। তুচ্ছ ঘটনায় অনাকাঙ্খিত হত্যাকাণ্ডে সংসার সুখে যেমনি ছন্দপতন ঘটেছে তেমনি পিতা-মাতার বুকে চেপেছে সন্তান হারানো কঠিন পাথর। এমই মন্তব্য গ্রামবাসীর।