মেহেরপুরের মদনাডাঙ্গা পরিদর্শন করলেন সংসদ সদস্যসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা

 

 

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গ্রামবাসীর বিশ্বাস ওঝাঁতে

মেহেরপুর অফিস:সর্প দংশন আতঙ্কিত মেহেরপুর সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রাম পরিদর্শন করেছেন এমপিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ। গতকাল বুধবার দুপুরে পরিদর্শনকালে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিলেও গ্রামবাসী সেই সনাতন পদ্ধতিতেই আটকে রয়েছেন। কয়েকজন ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. ইসমাইল ফারুক বলেছেন, আসলেই কি সাপ দংশন করছে? নাকি মনের ভুল? যে সব মানুষ সর্প দংশনের শিকার হচ্ছে বলে ওঝাঁদের নিকট চিকিৎসা নিচ্ছে তা সঠিক নয়। কেননা আতঙ্কে যে কোন কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি বা চুলকানি হতে পারে। তবে গ্রামের লোকজন যেভাবে ওঝাঁদের দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছে সেটা মোটেও ঠিক না। এতে বড় ধরণের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। তাই যদি সর্প দংশনের প্রকৃত ঘটনা ঘটে তাহলে বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি।

সর্প দংশন ও ওঝাঁ দিয়ে চিকিৎসার ঘটনা এলাকায় আলোচিত-সমালোচিত হয়ে উঠেছে। গতকাল দুপুরে মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টিমের সদস্যবৃন্দ ওই গ্রাম পরিদর্শন করেন। সাপে কামড়াচ্ছে নাকি মানুষ শুধুই আতংকিত হয়ে পড়ছে সে বিষয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কেউ সর্প দংশনের শিকার হলে কথিত কবিরাজের অপচিকিৎসা না নিয়ে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণের আহবান জানান এমপি ও জেলা প্রশাসক। ওঝাঁদের প্রচলিত চিকিৎসা দেয়া বন্ধের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু এতে ক্ষিপ্ত হয় গ্রামের কিছু লোকজন। তাদেরকে সর্প দংশন করছে এবং কবিরাজের চিকিৎসায় ভাল হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন বলেন, অতীতে কোন গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে তার জানা নেই। এটি অতিরঞ্জিত ও আতঙ্ক ছাড়া কিছু নয়। তবে যদি কাউকে সর্প দংশন করে তবে কবিরাজী চিকিৎসা না নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে আধুনিক চিকিৎসা নেয়ার আহবান জানান তিনি।

পুলিশ ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে ওই এলাকায় এক ব্যক্তি সর্প দংশনে মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় একজন মেম্বার ও তার সঙ্গীয় কয়েকজন কথিত ওঝাঁ চিকিৎসা দিচ্ছেন। ছড়িয়ে দিচ্ছেন আতঙ্ক। শরীরে ব্লেড দিয়ে কেটে মধ্যযুগীয় কায়দায় চিকিৎসার নামে যেভাবে অপচিকিৎসা করা হচ্ছে তা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটি বন্ধ না হলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে। ওই জনপ্রতিনিধি, দুই জন ওঝাঁসহ গ্রামের সন্দেহভাজন কয়েকজনের উপর নজরদারি করা হচ্ছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে। চিকিৎসার নামে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে এমপি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের পর কথিত সর্প দংশনের শিকার এক ব্যক্তিকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয় গতকাল বিকালে। কিন্তু গ্রামের কয়েকজনের বাধার মুখে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে গ্রামে নিয়ে ওঝাঁর চিকিৎসা দেয়া হয়। কবিরাজী চিকিৎসা দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেন মদনাডাঙ্গা গ্রামের কিছু মানুষ। শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কের কাছে পৌছালে পুলিশ তাদের ফিরিয়ে দেয়। ওঝাঁর চিকিৎসার দাবিতে এ ধরণের বিক্ষোভ মিছিল সচেতন মহলে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।

উল্লেখ্য, সাপ চোখে না পড়ছে না অথচ সাপের কামড় আতঙ্কে গত কয়েকদিন ধরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পুরাতন মদনাডাঙ্গা গ্রামবাসী। অনেকেই বাড়ি ছেয়ে অন্যত্র অবস্থান এবং শিশুদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তবে এটিকে খামাখা আতঙ্ক বলে আখ্যায়িত করেছেন কয়েকজন চিকিৎসক।