খিদের তাড়নায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা?

 

হতদরিদ্র পরিবারের ৫ম শ্রেণির ছাত্রীর মৃত্যু : পুলিশ পেয়েছে রহস্যের গন্ধ

 

স্টাফ রিপোর্টার: ৫ম শ্রেণির ছাত্রী মহিমার পিতা-মাতার দাবি খিদে সহ্য করতে না পেরে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশের সন্দেহ; বাড়িতে একা পেয়ে কেউ হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছে। এ সন্দেহের ভিত্তিতেই দরিদ্র পরিবারের শত অনুরোধ উপেক্ষা করে মহিমার মৃতদেহ গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করিয়েছে পুলিশ।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিতুদহ ইউনিয়নের হতদরিদ্র ভূমিহীন মেহের আলীর তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে মহিমা খাতুন (১২) ছিলো দ্বিতীয়। রোজগারের জন্য মেহের আলী দু দিন আগে ফরিদপুরে যান। পরশু মঙ্গলবার সকালে তার স্ত্রী আর্জিনা খাতুন যান গ্রাম সংলগ্ন মাঠে কচু তোলার কাজে। দুপুরে ফিরে দেখেন মেয়ে মহিমা গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস দেয়া অবস্থায় ঝুলছে।

মেয়ের দৃশ্য দেখে মা মজির্না মাঝে মাঝেই মুর্ছা যেতে থাকেন। তিনি বলেন, সকালে মেয়ে মহিমা খাওয়ার জন্য ভাত চায়। ভাত নেই বললে ও রেগে ওঠে। তখন বলি মরতে পারিসনে! ভাত না পেয়ে খিদের কারণেই আত্মহত্যা করেছে। মহিমার নানিসহ অন্যরাও অভিন্ন তথ্য দিয়ে গতপরশুই লাশ দাফনের প্রক্রিয়া করে। খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে মেহের আলীও বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। এরই মাঝে খবর পায় তিতুদহ ফাঁড়ি পুলিশ। লাশ দেখে ও ঘটনার বর্ণনা শোনার পর পুলিশের ঘোরতর সন্দেহ হয়। মহিমার মাসহ নিকটজনেরা লাশ ময়নাতদন্ত না করার জন্য অনুরোধ করলেও সন্দেহের কারণেই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রতিবেশীদের কয়েকজন বলেছেন, মেহের আলীর পিতা শওকত ফকির ছিলেন ভিক্ষুক। তার ৪ ছেলে-মেয়ের মধ্যে মেহের আলী ছোট। জমি-জমা বলতে কিছুই নেই। হতদরিদ্র। গ্রামেরই আলতাফ সাপুড়ের মেয়ে আর্জিনাকে বিয়ে করে শাশুড়ির ২ কাঠা জমিতে কুঁড়েঘর তুলে বসবাস করে আসছেন মেহের আলী। এক ছেলে দু মেয়ের মধ্যে মহিমা দ্বিতীয়। সে ৫ম শ্রেণিতে পড়তো। মহিমাকে একা রেখে তার মা আর্জিনা মাঠে কচু তোলার কাজে যান। বাড়িতে একাই ছিলো মহিমা। তাকে কেউ মেরে ফেলেছে নাকি সে আত্মহত্যা করেছে তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে অভাবি সংসার। খাওয়ার অভাব যে সংসারে লেগেই থাকে সেই সংসারের কেউ খিদে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করবে বলে বিশ্বাস করা কঠিন। আড়ালে নিশ্চয় কিছু আছে। পুলিশও মৃত্যুর আড়ালে রহস্যের গন্ধ পেয়েছে। লাশ দেখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার তেমন আলামতও মিলছে না বলে পুলিশ সূত্রের অভিমত। অবশ্য মহিমার পিতা গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ভাত চেয়ে না পেয়ে মেয়ে মারা গেছে। ময়নাতদন্ত করে কী হবে? এসব কি পুলিশের বাড়াবাড়ি নয়?

মহিমার মা অবশ্য বলেছেন, বেশ কিছুদিন ধরে কাজ না পেয়ে বাড়িতে বেকারই বসে ছিলেন মহিমার পিতা মেহের আলী। কয়েকদিন আগে গ্রামের কয়েকজন তাকে ফরিদপুরে কাজের কথা বলে সাথে করে নিয়ে যায়। ফরিদপুরে যাওয়ার সময় মেহের আলী বলে যায়, কাজ করে টাকা পাঠাবো। এ ক’দিন তোমরা ধার বাকি করে চাল কিনে খেও। পরশু রাতে সামান্য ভাত রান্না করে। খেয়ে সকলে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে মহিমা ভাত চায়। বলে খিদে লেগেছে। এ নিয়ে মা-মেয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটিও হয়। তাই বলে সে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে?