আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গায় সাপে কাটা রোগী নিয়ে কবিরাজের ঝাঁড়ফুঁক নাটক : মৃত্যু
মেহেরপুর অফিস/ভালাইপুর প্রতিনিধি: মেহেরপুর জেলা সদরের মদনাডাঙ্গায় সাপ আতঙ্ক গণহিস্ট্রিয়ায় রূপ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত ৩ দিনে প্রায় অর্ধশত নারী-পুরুষ শিশু-কিশোরকে সাপে কেটেছে বলে দাবি করা হয়েছে। আর এ দাবি করায় ওঁঝা-কবিরাজের যেনো কপাল খুলেছে। হাসপাতালের বদলে ওঁঝা-কবিরাজের ঝাঁড়ফুঁক কাটাছেড়া আর আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সাপে কেটেছে দাবি তুলে শক্ত করে বাঁধনে অঙ্গহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। এদিকে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা ঈদগাপাড়ার জিয়াকে বিষধর সাপে কাটলে ওঁঝার নিকট নিয়ে ঝাঁড়ফুঁক নাটক করা হয়। তাতেই প্রাণ যায় তার।
মেহেরপুর জেলা সদরের মদনাডাঙ্গায় যা হচ্ছে তা আতঙ্কের কারণেই। কলেজছাত্রী জলি বলেন, ছোট্ট একটি বাচ্চা সাপ তাকে কামড়ে দ্রুত পালিয়ে গেলো। গৃহবধূ আনজুয়ারা বলেন, রান্না করার সময় একটি সাপের বাচ্চা তাকে কামড় দিয়ে চলে যায়। এরকম অনেকে জানালেন সাপে কাটার কথা। অথচ দংশিত স্থানের দাগ মিলছে না। স্পষ্ট দৃশ্যমানও হচ্ছে না সাপ। এটাই হলো আতঙ্কের কারণে সাপে কেটেছে বলে ভ্রান্তধারণায় ভোগা। যার অপর নাম গণহিস্ট্রিয়া। চিকিৎসকদের অনেকেই এ মন্তব্য করে বলেছেন, যেকোনো ধরনের গণহিস্ট্রিয়া থেকে গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীকে মুক্ত করতে হলে ভীতি দূর করা জরুরি। ওঁঝা-কবিরাজ ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
স্থানীয় আমঝুপি ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান মিলন জানান, গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত গ্রামের গৃহবধূ, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, যুবক-যুবতী ও শিশুসহ প্রায় ৫০ জনকে সাপে কামড়িয়েছে। তবে কেউ সাপ দেখেননি। অদৃশ্য কোনো সাপ দংশন করছে বলে তাদের মনে ভ্রান্ত ধারণা জন্মেছে। সাপ আতঙ্কে অনেকেই পেশাগত কাজকর্মে যাওয়া এবং শিশুরা স্কুলে যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। ছিন্নি বিলিয়ে সাপ থেকে মুক্তি কামনা করছেন কেউ কেউ। এদের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আহতদের কথিত ওঁঝা-কবিরাজ দিয়ে ঝাঁড়িয়ে বিষ নামানো হচ্ছে বলে বানোয়াট দাবি করা হচ্ছে।
গাছের ডালের একটি অংশ কেটে তা থার্মোমিটার দাবি করে সর্প দংশনের রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন পুরাতন মদনাডাঙ্গা গ্রামের ওঁঝাসিরাজুল ইসলাম ও ইমাদুল ইসলাম। সাপে কামড় দেয়া সম্ভাব্য স্থানে ব্লেড দিয়ে কেটে ঝাঝরা করে বের করা হচ্ছে রক্ত। আদিম যুগীয় কায়দায় ঝাঁড়-ফুঁক দিয়ে গাছ-গাছড়ার রস খাওয়ানো হচ্ছে। এছাড়াও ক্ষত স্থানে দেয়া হচ্ছে আগুনের তাপ ও গরম পানি। একটি লেবু কেটে লবন মিশিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে বিষ গেছে কি-না তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এভাবে গত ৩ দিনে ৪০ থেকে ৫০ জন সাপে কামড়ানো রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. ইসমাইল ফারুক জানান, সর্প দংশনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকৃত পক্ষে সাপে কামড়ানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। সাপে কাটা রোগীকে ওঁঝা দিয়ে না ঝাঁড়িয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। হাসপাতালে সাপে কাটা রোগী চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন রয়েছে।
এদিকে আলমডাঙ্গা কয়রাডাঙ্গা ঈদগাপাড়ার শমসের আলীর ছেলে জিয়াউর রহমান (৩০) সর্প দংশনে প্রাণ হারিয়েছে। তার রয়েছে দু সন্তান। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মাঠে ঘাস কাটতে গেলে তাকে সাপে দংশন করে। হাসপাতালে না নিয়ে নেয়া হয় ভালাইপুর মুচিপাড়ার কবিরাজ কপিল উদ্দীনের কাছে। শুরু হয় ঝাঁড়ফুঁক কাটাছেড়া নাটক। কেটে যায় দীর্ঘ সময়। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। এরই এক পর্যায়ে হাসপাতালে নেয়া হলেও কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি মারা যান। চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে নিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।