ঠকানোর চক্রে ঘুরে ফিরে ঠকছি সকলে

 

শরীর ভালো না থাকলে মন ভালো থাকে না। মন ভালো না হলে ভালো কিছু হবে কীভাবে? সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। দেশে কি তার নিশ্চয়তা আছে? কৃষিজাত দ্রব্যে মাত্রারিক্ত কীটনাশক, কীটনাশাকেও ভেজাল। মাছসহ অধিকাংশ কাঁচা খাদ্যদ্রবে পচনরোধক তথা ফরমালিন দিয়ে অস্বাস্থ্যকর করে তোলা হচ্ছে। বাঁচার উপায়? আছে। সে পথে হাঁটছি না কেউ।

আমাদের দেশে চাষ করা চিংড়ির কদর ছিলো উন্নত বিশ্বে। প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো। তাতে ভাটা পড়েছে। কেন? চিংড়ি মাছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ তথা কীটনাশকের অস্তিত্ব মেলার কারণেই এ দশা। চিংড়ি মাছে কীটনাশক? এলো কীভাবে? আবাদি জমির ক্ষেতে দেয়া কীটনাশক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে ঘেরে যাওয়ায় চিংড়িতে তার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে ঘেরে যাওয়া কীটনাশক যদি উন্নতবিশ্বে রপ্তানিকৃত চিংড়িতে পাওয়া যায় এবং তা যদি তারা পরিহারে শক্ত পদক্ষেপ নেয় তা হলে আমরা প্রতিনিয়ত কী খাচ্ছি? ভাবলেই গা শিউরেওঠে। তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও দায়িত্ববোধের সাথে আমাদের তুলনা করতেও লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে অবয়ব।

ভাগ্যিস দেশের ১৭ কোটি মানুষই কিডনি রোগে এখনো আক্রান্ত হয়নি। আক্রান্তের সংখ্যা তিন কোটি বলে গবেষকদের একজন সেমিনারে উপস্থাপন করেছেন। মাত্রারিক্ত কীটনাশকের কারণে শুধু মানুষই স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে না, পরিবেশও ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, হচ্ছে। খেসারত কৃষককেও দিতে হচ্ছে। কীটনাশক প্রয়োগের কতোদিন পর ফল বা সবজি তুলে খাদ্যদ্রব্য হিসেবে বিক্রি করতে হয়? ক’জন কৃষক জানেন? জানানোর দায়িত্ব কার? তারা কোথায় থাকেন? এসব প্রশ্ন দেশের বাস্তবাবস্থায় বাতুলতা মাত্র। এরপরও বাঁচতে হবে। সুস্থ থাকতে হবে। স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা দিতে হবে। এ দাবি বোধ করি আপামর জনতার। তথা সকলের। তা হলে সকলে মিলে আমরা কেনো স্বাস্থ্যহানির পথে হাঁটছি?

একজন কৃষক তার ফসলে মাত্রারিক্ত কীটনাশক দিচ্ছেন। কীটনাশক প্রয়োগের সপ্তাহ ঘোরার আগেই তা তুলে বিক্রি করছেন। ভোক্তাদের ভুগতে হচ্ছে স্বাস্থ্য সমস্যায়। ওই কৃষক? শিকার হচ্ছেন ভেজালের। কীটনাশকেও ভেজাল না হলে কৃষকের মধ্যে মাত্রারিক্ত কীটনাশক প্রয়োগের প্রবণতা এলো কোত্থেকে? শুধু কি কীটনাশকে ভেজাল রোধেও ভেজাল। কর্তাদের কর্তব্যে ভেজালের কারণেই কৃষককে পদে পদে ভেজালের শিকার হতে হচ্ছে। কৃষক ক্ষতি করছেন ভোক্তাদের, ভোক্তাদেরই অর্থলিপ্সু ব্যবসায়ীরা ঠকাচ্ছেন কৃষককে। তদারকিতে ভেজালের কারণে তদারক কর্তাও কি ঠকছেন না? ঠকছেন। ঠকানোর চক্রে ঘুরে ফিরে ঠকছি সকলে। ঘোষবাড়ির দধি থেকে বিটিভি- চক্রমুক্ত আছে কি? আড়ালে চাক্ষুস লাভের আশা। নিজের দোষ না খুঁজে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর প্রবণতায় হারাচ্ছি প্রতিকারের পথ।

অবশ্যই আইনের ভেজালমুক্ত প্রয়োগের পাশাপাশি কৃষকসহ ভোক্তা সাধারণকে সচেতন করে তুলতে হবে। হাট-বাজারে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য শনাক্তকরণ যন্ত্র রাখতে হবে। তদারক কর্তা ও স্থাপিত শনাক্তকরণ যন্ত্র অবশ্যই ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। ক্ষতিকর খাদ্যদ্রব্য পরিহারে ভোক্তাদের ঐক্যমত আগামীদিনগুলোকে নিরাপদ করবে। ঐক্যমত গঠনের পূর্বশর্ত ভালো মন্দ উপলব্ধি বোধ জাগিয়ে তোলা। জাগো, বাহে জাগো।