ঝিনাইদহ অফিস: কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় চুরির অপবাদ দিয়ে ঝিনাইদহের মহেশপুরে হালিমা খাতুন (৩২) নামে এক গৃহবধূর ওপর মধ্যযুগীয় নির্যাতন চালানো হয়েছে। গ্রাম্যসালিস বসিয়ে তাকে বাঁশের সাথে বেঁধে রেখে বেধড়ক মারপিট করাসহ কেটে দেয়া হয়েছে মাথার চুল। জেলার মহেশপুর উপজেলার নাটিমা স্কুলপাড়ার গত বৃহস্পতিবার সকালে কতিপয় গ্রাম্য মাতবর বর্বরোচিত এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করায় সালিসকারীরা ওই গৃহবধূকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। খোঁজ পেয়ে মানবাধিকারকর্মীরা গত শুক্রবার বিকেলে তাকে উদ্ধার করে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তবে প্রাণনাশের হুমকিতে শনিবার সকালে হাসপাতাল ছেড়েও পালিয়েছে নির্যাতিত গৃহবধূ। এদিকে পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে খুরশিদা নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে ঘটনার মূল নায়ক শফিক উদ্দিনসহ অন্যরা পলাতক রয়েছেন।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী নাটিমা হাইস্কুলপাড়ার হতদরিদ্র আব্দুল মজিদের স্ত্রী হালিমা খাতুন। নির্যাতন সম্পর্কে হালিমা খাতুন বলেন, গ্রামের সলেমানের ছেলে শফিক উদ্দিন ও সিরাজের ছেলে মিন্টু প্রায়ই তাকে খারাপ প্রস্তাব দিতো। এতে সে রাজি না হওয়ায় ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারই অংশ হিসেবে তাকে চুরির অপবাদ দিয়ে নির্যাতন ও মাথার চুল কেটে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে তিনি আত্মীয়স্বজনকে ঘটনা খুলে বলেন এবং থানায় মামলা করেন।
নাটিমা গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে হালিমার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। গ্রামের প্রভাবশালী শফিক উদ্দিনসহ কয়েকজন মাতবরের নেতৃত্বে চুরির অপবাদে চলে এই নির্যাতন। প্রথমে বাঁশের সাথে বেঁধে শফিকসহ কয়েকজন নারী হালিমার ৯ বছর বয়সী ছেলের সামনে তাকে বেদম প্রহার করে। কিন্তু তারপরও চুরির কথা স্বীকার না করায় মাথার চুলও কেটে দেয়া হয়। সালিসে মধ্যযুগীয় নির্যাতন চালানোর সময় শতাধিক মানুষ উপস্থিত থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি হালিমাকে রক্ষা করতে। গ্রামবাসী আমজাদ, জহুর আলী, আশিক, রোকনুজ্জামানসহ অনেকেই এই ঘটনার জন্য জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন। এদিকে খবর পেয়ে মানবাধিকার কর্মীরা শুক্রবার বিকেলে হালিমা খাতুনকে উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় হালিমা খাতুন বাদী হয়ে মহেশপুর থানায় ৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে তাকে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। প্রভাবশালীদের হুমকিতে শনিবার সকালে হাসপাতাল ছেড়ে হালিমা পালিয়েছেন বলে জানান মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আবদুস সালাম।
ঘটনার মূল নায়ক মোবাইলফোনে শফিক উদ্দিন বলেন, হালিমা চোর তাই এলাকাবাসী তাকে পিটিয়েছে। তবে ঘটনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেন। কিন্তু মোবাইলফোনে এলাকাবাসীর ধারণ করা ভিডিওচিত্রে তাকে মারপিট করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী আফাজ উদ্দীনের বাড়িতে হালিমা চুরি করতে গিয়েছিলো, এমন কথা জানিয়ে তাকে মারপিট করার কথা জানিয়েছে তার স্ত্রী খুরশিদা। সে একজন নষ্ট মেয়ে বলে দাবি তার।
মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, নারী নির্যাতনের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ নির্যাতনকারী আফাজ উদ্দীনের স্ত্রী খুরশিদাকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। নির্যাতিত গৃহবধূ হালিমা খাতুনকে আইনি সহায়তা দেয়াসহ অপরাধীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সচেতনমহল।