অপতৎপরতার শুরুতেই শক্ত হাতে রুখতে হবে

 

যেকোনো ধরনের বা প্রকৃতির অপতৎপরতা শুরুতেই শক্ত হাতে রুখতে পারলে সমাজ তার সুফল ভোগ করে। ব্যত্যয় ঘটলে বাড়ে খেসারত। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকায় উঠতি বয়সী একদল যুবকের মুখোশ পরে মধ্যরাতে ঘোরাফেরা আর যাই হোক শুভ লক্ষণ নয়। অভিযোগ রয়েছে, মাঝে মাঝে এরা রাস্তায় ছোটখাটো ছিনতাই করে। এদের ছিনতাইয়ের শিকার মূলত মধ্যরাতের ট্রেনযাত্রী ও হাসপাতালগামী রোগীর লোকজন। এছাড়া মোবাইলফোনে হুমকি-ধামকি দিয়ে চাঁদাবাজিও হচ্ছে এলাকায়। ওরাই যে চাঁদাবাজি শুরু করেছে বা করেনি তাও তদন্ত সাপেক্ষ। তা ছাড়া কেন একজন চিকিৎসকের বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে নৈশপ্রহরীকে হুমকি-ধামকি দিলো? আড়ালে কী চাঁদার জন্য কৌশলে হুমকি? সঙ্গত কারণেই এ প্রশ্ন।

একজন চিকিৎসককে কখন হাসপাতালে ছুটতে হয় তার কোনো ইয়োত্তা নেই। জরুরি রোগী এলেই ডাকতে হয়। ঘড়ির কাঁটা কোথায় বা রাত কতোটা গভীর তা না দেখেই জরুরি রোগীর চিকিৎসা দিতে চিকিৎসককে ছুটতে হয়। যদিও রাতে জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসককে ডেকে পাওয়া অতো সহজ আর নেই। এইতো সেদিন রাতে দৈনিক মাথাভাঙ্গার একজন সদস্যের প্রসূতি স্ত্রীকে সদর হাসপাতালে ভর্তির পর ভয়াবহ হয়রানির ছবি ফুটে ওঠে। একদিকে প্রসূতির যন্ত্রণায় কাতরানো, অপরদিকে চিকিৎসকের মোবাইলফোনে একের পর এক কল করেও সাড়া না মেলা। অবশ্য শেষ পর্যন্ত প্রসূতিকে চুয়াডাঙ্গার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে রক্ষা। যদিও সেখানেও অ্যানেসথেসিয়ার গড়িমসির ছবিটাও ছিলো হতাশ করার মতোই। অবশ্যই যারা সেবার ব্রত নিয়ে মহান পেশায় নিয়োজিত তাদের রাতবিরেত দেখলে হয় না। তাদের যেমন সেবার কাজে সর্বদা নিয়োজিত থাকতে হয়, তেমনই তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। একজন চিকিৎসকের বাসার সামনে কেন মুখোশ পরা একদল যুবক? খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। কারণ বেশ কিছুদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকায় চাঁদাবাজি হচ্ছে। কোনো কোনো চিকিৎসকসহ ক্লিনিক মালিকদের কাছে চাঁদার দাবিতে হুমকি-ধামকি দেয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য অনেকেই পুলিশে নালিশ দুরস্ত, ঝামেলামুক্ত হওয়ার জন্য বা ভয়ে গোপনে চাঁদাবাজদের সাথে আপস করছেন। এতে চাঁদাবাজচক্র উৎসাহী হয়ে আরো ভয়ঙ্কর হলেও কে ভাবে সে কথা?

নতুন করে বলার অবকাশ থাকে না যে, এক সময়ের সন্ত্রাস কবলিত হিসেবে কলঙ্কিত চুয়াডাঙ্গা জনপদের মানুষ এখনও হারানো সাহস পরিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে পায়নি। পেতে শুরু করেছে। এর মাঝে গজে উঠছে অঞ্চলভিত্তিক ছোট ছোট গ্যাং। এদের প্রতিহত করতে হলে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা তথা পুলিশেরই অধিক দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন। চাঁদাবাজচক্রের হুমকি-ধামকির শিকার কেউ পুলিশে নালিশ করে প্রতিকার না মিললে সাধারণ মানুষ আপসের পথেই হাঁটে। এতে চক্রবৃদ্ধিহারে ছড়াতে থাকে চাঁদাবাজ। তেমনটি এখন পর্যন্ত না হলেও সম্প্রতি দৃশ্যমান কিছু ঘটনা সেদিকে ধাবিত হওয়ারই ইঙ্গিত বহন করছে। হাসপাতাল এলাকায় নিয়মিত পুলিশি টহল জোরদার করার পাশাপাশি গজে ওঠা গ্যাং ধরে আইনে সোপর্দ করা জরুরি।