তোমাদের সাহসী অগ্রযাত্রা সমাজের অনুপ্রেরণা

 

এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে যশোর শিক্ষাবোর্ড শিক্ষানুরাগীদের হতাশ করলেও কয়েকজনের অদম্য মেধা এবং প্রতিকূল পরিবেশের সাথে লড়াই অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। সমস্যা কোনো সমস্যাই নয়। প্রয়োজন লক্ষ্যে পৌঁছুনোর আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সংগ্রাম। অধ্যবসায়।প্রতিকূল পরিবেশকে অনুকূলে নেয়ার মতো সাহস।

দৃষ্টিশক্তিহারা ছেলের পড়া রেকর্ড করেন মা। মোবাইলফোনে ওই রেকর্ড মন দিয়ে শোনেন ছেলে। এটাই তাঁর পড়ার একমাত্র উপায়।মা-ছেলের অনবদ্য এ প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছে। এবার এইচএসসি পরীক্ষায়জিপিএ-৫ পান আবদুল্লাহ আল শাইম। আর সাধারণ এক নারী চায়না খাতুন হয়ে ওঠেনঅদম্য মা।মায়ের তৈরি করা পড়ার রেকর্ড শুনেই এবার কুষ্টিয়ার দৌলতপুরউপজেলার পিপলস ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়েছেন আবদুল্লাহ।তিনি পরীক্ষা দিয়েছেন শ্রুতিলেখকের সহায়তায়।আবদুল্লাহ জন্মান্ধ ছিলেননা। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম তিনি বুঝতে পারেন তার দুই চোখেইসমস্যা হচ্ছে। কোনো কিছুই ভালো করে দেখতে পেতেন না। কিন্তু চিকিৎসকেরকাছে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। অন্ন-বস্ত্রের সংস্থানই ঠিকমতো হয় না তাদের। কিন্তুচোখের সমস্যা দিনদিন মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আবদুল্লাহ চিকিৎসকের কাছেগিয়েছেন ঠিকই, ততো দিনে তার দুচোখ প্রায় দৃষ্টিশূন্য হয়ে গেছে।আবদুল্লাহরবাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার গোবরগাড়া গ্রামে। তার বাবা মনিরুলইসলাম কৃষিকাজ করে সংসারের খরচ মেটান। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার কুলপালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রইচ উদ্দিন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে ২০১৪ সালের এইচএসসি মানবিক বিভাগে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ৬০ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে পাস করেন । তিনি কতো পেয়ে পাস করেছেন তার চেয়ে ঢের গুরুত্বের বিষয়টি হলো তিনি ৫৬ বছর বয়সে পরীক্ষা দিয়ে পাস করলেন। এদিকে চুয়াডাঙ্গা মাখালডাঙ্গার আবুল হাসেমের ছেলে আব্দুল হাকিম এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। অর্থাভাবে লেখাপড়া বন্ধ হলেও উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নের মৃত্যু হতে দেয়নি। অন্যের কাছে হাতও পাতেনি। অভাব ঘোচাতে সে বাড়ির নিকটস্থ বাঁশঝাঁড়ের নিচে চেয়ারপেতে সেলুনের দোকান খুলে বসে। অর্জিত আয় দিয়ে পিতার সংসারে সহযোগিতা করার পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়ে এলাকায় সাড়া ফেলেছে।

আব্দুল্লাহ, রইচ উদ্দীন ও আব্দুল হাকিম আমাদের সমাজের অনুপ্রেরণা। বাধা কোনো বাধাই নয়। এদের সংগ্রাম, লক্ষ্যে পৌছুনোর অধ্যবসায় অবশ্যই সমাজের পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলো, রোগাক্রান্ত শিক্ষার্থী বা পিছিয়ে পড়া বয়সী সকলকেই শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহ জোগাবে। অভিবাদন আব্দুল্লাহ ও তার মাকে। অভিনন্দন আব্দুল হাকিমসহ শ্রদ্ধেয় রইচ উদ্দীনকে।