আলমডাঙ্গায় অর্পিত সম্পত্তি দখলপাঁয়তারার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ

বক্তাদের অভিযোগ : ভারতীয় নাগরিক দু ভাইয়েরকোটি কোটি টাকার সম্পত্তি হাতানোর কাজে সহযোগিতায় মীর মহি ও গিরিধার

স্টাফ রিপোর্টার:চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি ও স্মারকলিপি পেশকালে বক্তারা বলেছেন,ভূমিদস্যু গিরিধারী লাল মোদী ও আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র মীর মহিউদ্দিনের সহযোগিতায় ভারতীয় নাগরিক দু ভাই রাজারাম পাডিয়া ও পুরুষোত্তম পাডিয়া আলমডাঙ্গার ভোটার তালিকায় নাম উঠিয়ে ১০ বিঘা অর্পিত সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করছেন। আলমডাঙ্গা উপজেলাবাসীর ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি পালনকালে বক্তারা এ অভিযোগ তুলে চক্রের দু সদস্যের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় দু ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক ১০ বিঘা অর্পিত সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারার প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলাবাসীর ব্যানারে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। পরে পুলিশ সুপার রশীদুল হাসানের নিকটও স্মারকলিপি পেশ করা হয়।

মানববন্ধন চলাকালে চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক খুস্তার জামিল, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদুজ্জামান লিটু বিশ্বাস, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল মালেক, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলাম মালিক, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রুবাইত বিন আজাদ সুস্তির, জেলা ছাত্রলীগের তামিম হাসান তারেক, আসিফ ইকবাল স্বপন প্রমুখ আলমডাঙ্গাবাসীর আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান কাজি খালেদুর রহমান অরুন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান কাদির গণু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, আলমডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু মুসা, আলমডাঙ্গা বিআরডিবির চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম, খাদিমপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি হামিদুল ইসলাম আজম, আলমডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আহসান উল্লাহ, যুগ্মসম্পাদক শাহিন রেজা প্রমুখ।

পেশকৃত স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার মৃত প্রহল্লাদ রায় পাডিয়ার নামে দশ বিঘা সম্পত্তি ও স্থাপনা ছিলো। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর প্রহল্লাদ রায় পাডিয়া সপরিবারে ভারতে পাড়ি জমান। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন সরকার তার এসব সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করেন। যা স্বাধীনতা যুদ্ধের পর অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। প্রহল্লাদ রায় পাডিয়ার ৭ ছেলে কিশোর পাডিয়া, প্রকাশ পাডিয়া, রমেশ পাডিয়া, সত্য পাডিয়া, পুরুষোত্তম পাডিয়া, রাজা রাম পাডিয়া ও লাল্লী পাডিয়া। এর মধ্যে পুরুষোত্তম পাডিয়া ও রাজা রাম পাডিয়া স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আলমডাঙ্গায় ফিরে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। এ সময় কিছুদিন থাকার পর তারা আবার ভারতে পাড়ি জমান। দীর্ঘ বছর তারা ভারতে স্থায়ী বাসিন্দা ও বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে পরিচিত। ওই সব অর্পিত সম্পত্তি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে প্রায় ৪০টি পরিবার বসবাস ও ব্যবসা বাণিজ্য করছে। সরকার অর্পিত সম্পত্তি প্রতার্পণ আইন পাস করলে এ সম্পত্তির পূর্ব মালিকদের কেউ যদি এ দেশে স্থায়ী থাকেন এবং অব্যাহত নাগরিক হন তবেই ফিরে পেতে অবমুক্তির মামলা করার সুযোগ পাবেন। এ সুযোগে ভুমিদস্যু গিরিধারী লাল মোদী ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র মীর মহি উদ্দীন জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করেন। মীর মহি উদ্দীন ২০১২ সালে পৌরসভার নাগরিকত্ব ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে আলমডাঙ্গার মানুষ ফুঁসে ওঠে। নির্বাচন অফিস ঘেরাও, সর্বদলীয় মানববন্ধনসহ আন্দোলনের মুখে চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গা নির্বাচন অফিস পৃথক তিনটি তদন্ত করে ভুয়া ভোটার হিসেবে পুরুষোত্তম ও রাজা রামের নাম কর্তনের জন্য প্রধান নির্বাচন অফিসে পাঠান। এমনই পরিস্থিতিতে চুয়াডাঙ্গা আদালতে বিচারাধীন মামলায় ওই দুজনকে স্বশরীরে হাজির হওয়ার জন্য গত ৬ জুলাই দিন ধার্য করে। ওই তারিখে বিজ্ঞ আদালতে হাজির না হয়ে তাদের পক্ষের উকিল দিন পরিবর্তনের আবেদন করলে ২১ আগস্ট হাজিরার দিন ধার্য করা হয়। ধার্য তারিখের আগেই জালিয়াতচক্র ১৪ আগস্ট বাদী পক্ষের উকিলকে না জানিয়ে ভুয়া দুজনকে হাজির করিয়ে, পরবর্তীতে নির্ধারিত মামলার তারিখে হাজির না হয়ে, উকিল হাজিরা দেবে বলে আবেদন করেন। এ কারণে ন্যায় বিচারের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমরা আলমডাঙ্গাবাসী ওই সব জালিয়াতচক্রের জালিয়াতি করে সরকারি সম্পত্তি হাতিয়ে নেবার চক্রান্তের তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সাথে জড়িত চক্রান্তাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

স্মারকলিপিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- হাসান কাদির গণু, হেলাল উদ্দীন, আবু মুসা, শরিফুল ইসলাম খান, শাহ আলম, কাজী খালিদুর রহমান অরুণ, আশাবুল হক ঠান্ডু প্রমুখ। স্মারকলিপি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নিকট পেশ করা হয়। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি গ্রহণকালে জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন বলেন, যতো দ্রুত সম্ভব প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ সুপার রশীদুল হাসানও অভিন্ন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।