গাংনী চাঁদপুরের লালন অনুসারী আবু বক্কর ফিরলেন নিজ বাড়ি

  শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে উভয় পক্ষ একমত

গাংনী প্রতিনিধি: ১৩ দিন পর বাড়ি ফিরলেন মেহেরপুর গাংনী উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের লালনভক্ত আবু বক্কর। গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকা লালন একাডেমীর প্রতিনিধি ও পুলিশের উপস্থিতিতে তিনি বাড়িতে পৌঁছান। গাংনী পৌর মেয়রের মধ্যস্থতায় গ্রামবাসী ও লালন অনুসারীদের বিবাদমান বিরোধ মীমাংসায় সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ।

গ্রামবাসী ও লালন অনুসারীদের মাঝে বিরোধের জের ধরে কিছুদিন ধরে মামলা-হামলা ও পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদী কর্মসূচিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন উভয় পক্ষের লোকজন। গতকাল দুপুরে ঢাকার লালন একাডেমীর গবেষক সাইমন জাকারিয়ার নেতৃত্বে লালনভক্ত বাউল শিল্পীদের একটি দল ঢাকা থেকে গাংনীতে পৌঁছান। এসময় তারা গাংনী দোয়েল ক্লাবে এলাকার লালন অনুসারী, গাংনী পৌর মেয়র, ক্লাব সদস্য ও স্থানীয় মানুষের সাথে মতবিনিময় করেন। আলোচনায় বেরিয়ে আসে চাঁদপুর গ্রামে ঘটে যাওয়া প্রকৃত ঘটনা। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে কিছু মানুষের অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডে চরম তিক্ততায় পৌঁছে বলে প্রতীয়মান হয় ঢাকার প্রতিনিধি দলের কাছে। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা আবু বক্করকে নিয়ে পুলিশ প্রহরায় চাঁদপুর গ্রামে পৌঁছায়। আবু বক্করকে পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

চাঁদপুর গ্রামের মানুষের সাথে বাউলবৃন্দ মতবিনিময় করেন। অল্প সময়ে গানে গানে আনন্দিত হয়ে ওঠেন উপস্থিত সকলেই। তারা বলেন, যেহেতু এ দেশ ধর্ম নিরপেক্ষ তাই যে যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে। কিন্তু বিভিন্ন সময় দেশের অনেক জেলায় বাউলদের ওপর নির্যাতন করা হয়। বাউলদের বিধর্মী বলে গালি দেয়া হয়। যেহেতু বাউলদের চর্চা মানবতার চর্চা। এ চর্চা সামাজিকভাবে গৃহিত হয়েছে। তাই বাউলদের জন্য সরকারিভাবে একটি নীতিমালা তৈরির দাবি জানান বাউল শিল্পী ও গবেষকরা। এছাড়াও এ গ্রামে একটি বড় সাধুসংঘ করে গ্রামবাসী ও বাউলদের মধ্যে যে দুরত্ব তৈরি হয়েছে তা দূর করে লালনের আদর্শ সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানান সাইমন জাকারিয়া।

প্রতিনিধি দলে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকার কণ্ঠশিল্পী আনুশে আনাদিল, রিমোন ফিরোজ, জয়ন্ত হাওলাদার, তানজিলুর রহমান, শফি মণ্ডল ও রেজা কবির এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা বাউল সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মহিউদ্দীন শাহ, সাধারণ সম্পাদক মুসলিম উদ্দীন উরফে জুরাইন শাহসহ গাংনীর বাউলবৃন্দ। এলাকার বাউলদের সাবির্ক নিরাপত্তার আশ্বাস দেন মেহেরপুর সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আব্দুল জলিল।

এদিকে ঢাকার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা চাঁদপুর থেকে ফিরে গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলীর সাথে তার কার্যালয়ে মতবিনিময় করেন। ওই গ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে তারা মেয়রকে মধ্যস্থতা করার অনুরোধ করেন। অচিরেই উভয়পক্ষের লোকজনের সাথে বসে মীমাংসা করা হবে বলে আশ্বাস দেন পৌর মেয়র।

উল্লেখ্য, চাঁদপুর গ্রামের লালন অনুসারী আবু বক্করের সাথে তার ছোট ছেলে রতন মিয়ার জমি নিয়ে বিরোধ বাধে। ঘটনাক্রমে রতনের পক্ষ নেয় গ্রামবাসী। গ্রামে কোনঠাসা হয়ে পড়েন লালন অনুসারীরা। উভয় পক্ষের বিরোধ চরম তিক্ততায় পৌঁছায়। গ্রামের জামায়াত-শিবিরের ১৭ জনের নামে মামলা দায়ের করেন আবু বক্কর। মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে গ্রামবাসী তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে গত ৭ আগস্ট বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান আবু বক্কর। গ্রামবাসী তাকে মারধর করে মাথার চুল কর্তন করে নিয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। বাউলদের নিরাপত্তার দাবিতে বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করেন লালন অনুসারীরা। গ্রামবাসীও সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্নভাবে মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদ জানায়।