রাজধানীর সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানের ২০ দলীয় জোটের সমাবেশে মির্জা ফখরুল

 

বাকশাল কায়েমের চক্রান্ত করছে সরকার : রুখতেই আন্দোলন

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপিরভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের অধিকার হরণকরতেই সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই সরকার দেশে বাকশাল কায়েমেরষড়যন্ত্র করছে। সোহওয়ার্দ্দী উদ্যানে ২০ দলীয় জোটের সমাবেশে প্রধান অতিথিরবক্তব্যে তিনি একথা বলেন।তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মুখেগণতন্ত্রের ফেনা বের হলেও এখন তাদের আসল চেহারা উন্মোচিত হতে শুরু করেছে।তাদের মুখোশ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না, আন্দোলন করে এ সরকারকে সরাতে হবে।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাবাতিলের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের সমাবেশে এসব কথা বলেনমির্জা ফখরুল। সরকারের বিরুদ্ধে দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখেদাঁড়ানোর আহ্বানও জানান। তিনি বলেন, যে লড়াই চলছে, তা২০-দলীয় জোটের ক্ষমতায় যাওয়া বা খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করার লক্ষ্যেনয়, এটা গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই।

সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত হননি। মির্জাফখরুল বলেন, ক্ষমতায় এসে সরকার একের পর এক মিডিয়া বন্ধ করেছে। এখনক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে একের পর এক আইন করে চলেছে। এই সরকার গণতন্ত্রেবিশ্বাস করে না। তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলেও জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাকরে কণ্ঠরোধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এখন সম্প্রচার নীতিমালা করে তারাপ্রমাণ করেছে জনগণের রায়ে তারা বিশ্বাস করে না। এজন্য প্রধানমন্ত্রীসহআওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, গণতন্ত্র থাকলে দেশের উন্নয়ন হয় না।
বিএনপিরভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ ঠিক একইভাবে মানুষেরবাক স্বাধীনতা স্তব্ধ করে দিয়েছিলো।তারা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে জনগণেরঅধিকার হরণ করেছিলো।সব পত্রিকা বন্ধ করে মাত্র ৪টি পত্রিকা সরকারেরনিয়ন্ত্রণে রেখেছিলো। এবার ক্ষমতায় এসে চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, আমারদেশ ইসলামী টিভি বন্ধ করে দিয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের মতোই আবারগণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, তাদেরমুখোশ খুলে গেছে। বাংলাদেশকে আবার তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করতে ব্যস্ত হয়েউঠেছে। তারা মনে করে দেশের প্রভু তারা। তারা দেশের গণতন্ত্র হত্যা করতেমেতে উঠেছে। এরই নব সংস্করণ বিচারপতিদের অভিসংশন ক্ষমতা সংসদের হাতে নেয়াহচ্ছে। যে সংসদে কোনো জনগণের প্রতিনিধি নেই।তিনি এই সিদ্ধান্ত একদলীয়সিদ্ধান্ত আখ্যায়িত করে বলেন, যে সংসদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, তার কোন আইনজনগণ মানবে না।মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আওয়ামী লীগ গণবিচ্ছিন্ন হয়েগেছে। তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। জনগণকে তারা গোলাম বানাতে চায়। আওয়ামীলীগ যদি জনগণের কল্যাণে কাজ করত, তাহলে গণতন্ত্র হত্যা করতো না, গণমাধ্যবন্ধ করতো না।আওয়ামী লীগের অভ্যাস গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমকে হত্যা করা। এদেশেরজনগণ আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তিনি দুর্নীতিবাজ এই সরকারকেহটাতে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান।

নীতিমালারপ্রতিবাদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশেবৃষ্টি সত্বেও জনতার ঢল নেমেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে ইঞ্জিনিয়ারিংইনস্টিটিউটের বিপরীতে সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানে প্রবেশদ্বারের সামনে  সমাবেশশুরু হয়।  সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের সহস্রাধিকনেতাকর্মী। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে হাজির হন জোটের নেতাকর্মীরা।

ঢাকামহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী সোহেলের পরিচালনায় ঢাকা মহানগরআহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনভারপ্রাপ্তমহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সদস্য আর এ গণি, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা কাউন্সিলর সদস্য অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সামসুজ্জামানদুদু, যুগ্মমহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লা ভুলু, মিজানুর রহমানমিনু।

সমাবেশে দুপুর থেকেই ঢাকা মহানগর বিএনপির বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডেরমিছিল সভাস্থলে এসে উপস্থিত হয়। বেলা আড়াইটায় সমাবেশ স্থল জনতার ভীড়েপূর্ন হয়ে যায়। বিকেল ৩টার দিকে বৃস্টি শুরু হয়। বৃস্টি উপেক্ষা করে জনতাসমাবেশ স্থলে অবস্থান নেয়।বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও ২০ দলীয় জোটেরনেতারা বক্তব্য রাখেন।মহাসমাবেশকে ঘিরে নিরাপত্তার জোরদার করা হয়েছে।সমাবেশেকে ঘিরে নাশকতা ও সহিংসতা এড়াতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যেরপাশাপাশি র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহাবাগ, মৎস ভবন, পল্টনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ওসড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

এদিকে সরকার ঘোষিত সম্প্রচার নীতিমালার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমাবেশ করেছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কার্যালয় চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সমাবেশে ১নং যুগ্মআহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু,যুগ্মআহ্বায়ক খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা, মজিবুল হক মালিক, জেলা জামায়াতের আমির আনোয়ারুল হক মালিক, জেলা বিজেপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শফিউল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. এমএম শাহজাহান মুকুল, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজি মজিবর রহমান, জেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রউফুন নাহার রীনা, এম জেনারেল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সুরা সদস্য অ্যাড. আসাদুজ্জামান, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মনির, জীবননগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামানসহ ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন,‘সরকার একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে ও গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই কালাকানুন করেছে। অবিলম্বে এই আইন বাতিল করতে হবে। সমাবেশে চুয়াডাঙ্গা সদর,দামুড়হুদা, জীবননগর ও আলমডাঙ্গা থেকে উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে শহীদ জিয়াউর রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী এলকে সিদ্দিকী, সাবেক হুইপ আবু সাঈদ খানসহ জাতীয়তাবাদী দলের এ যাবতকাল মৃত্যুবরণকারী সকল নেতাকর্মীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নের প্রতিবাদে ঝিনাইদহে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে জেলা বিএনপি। মঙ্গলবার সকালে শহরের পুরাতন ডিসি কোর্ট চত্বর থেকে এক মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান প্রদক্ষিণ শেষে পোস্ট অফিস মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে পোস্ট অফিস মোড়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশ পৌর বিএনপির সভাপতি জাহিদুজ্জামান মনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক, এসএম মশিয়ার রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম, শাহাজাহান আলী, আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা, সাজেদুর রহমান পপ্পু, আশরাফুল ইসলাম পিন্টু, প্রমুখ। প্রতিবাদ সমাবেশে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান বলেন, আওয়ামীলীগ গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার জন্য এই সম্প্রচার নীতিমালা করেছে। তিনি এই নীতিমালা বাতিলের দাবি জানান।