পথ ফুরোবার আগেই থামলো পথিক

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: সিরিজেরশুরু থেকেই বাজছে বিদায়ের বিউগল। চিরনশ্বর এই পৃথিবীর চিরাচরিত নিয়মেই এসেগেলো সেই অন্তিম মুহূর্ত। সমাপ্তি ঘটল একটি বর্ণময় অধ্যায়ের। প্রিয় সিংহলিজস্পোর্টস ক্লাব মাঠে কাল জীবনের শেষ টেস্ট ইনিংসটি খেলে খেললেন মাহেলাজয়াবর্ধনে। শাদা পোশাকে আজ শেষবারের মতো মাঠে নামবেন শ্রীলংকার কিংবদন্তিব্যাটসম্যান। কিন্তু ব্যাট হাতে টেস্ট আঙিনায় আর কখনোই দেখা যাবে না তাকে।

কলম্বোটেস্টের চতুর্থ দিনে জীবনের শেষ টেস্ট ইংনিসে দারুণ কিছু করার মঞ্চপ্রস্তুতই ছিলো জয়াবর্ধনের। ৪৯ রানে দিন শুরু করে খুব দ্রুতই পৌঁছেগিয়েছিলেন ৫০তম টেস্ট অর্ধশতকের ঘরে। কিন্তু পাকিস্তানি স্পিনার সাঈদআজমলের বলে ক্ষণিকের ভুলেই সব শেষ। ৫৪ রানে থেমে যায় তার শেষ টেস্ট ইনিংস।তা হোক, হাসি মুখেই কাল মাঠ ছেড়েছেন জয়াবর্ধনে। ১৬ বছরের আকাশছোঁয়াঅর্জনের ক্যারিয়ার নিয়ে শুধু গর্বই করতে পারেন মাহেলা। ১৪৯ টেস্টে ৩৪টিসেঞ্চুরি ও ৫০টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪৯.৮৪ গড়ে ১১ হাজার ৮১৪ রান। সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকদের তালিকায় সাত নম্বরে থেকে টেস্টকে বিদায় জানালেন জয়াবর্ধনে। আরকী চাইতে পারতেন। লংকান ক্রিকেটের এই ব্যাটিং স্তম্ভেব বিদায়টা আরও রঙিনকরে তুলতে জয়টাও প্রায় মুঠোবন্দি করে ফেলেছে স্বাগতিকরা। জয় থেকে মাত্র তিনউইকেট দূরে রয়েছে শ্রীলংকা।

টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আগেই বিদায় নিয়েছেন। ঢাকায় গত এপ্রিলেশ্রলিংকা টি-২০ বিশ্বকাপ জেতার পর। এবার পাঁচ দিনের ক্রিকেটের সঙ্গেওসম্পর্ক ছিন্ন করলেন। রইলো বাকি ওয়ানডে। এখন ক্রিকেটের সঙ্গে তার মায়ারবাঁধন অটুট রাখবে শুধু এই ফরম্যাট। হয়তো আগামী বছর ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপখেলেই তিন কাঠির খেলার সঙ্গে পুরোপুরি সন্ন্যাস নেবেন জয়াবর্ধনে।ক্রিকেটপ্রেমীরাতাকে মনে রাখবেন একজন অসাধারণ ডান-হাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে। যিনি টেস্ট ওওডিআই দুটি ফরম্যাটেই ১১ হাজারের বেশি রান করা পাঁচজন ব্যাটসম্যানেরঅন্যতম। অপর চারজন হলেন-শচীন টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিং, জ্যাক ক্যালিস এবংতার সতীর্থ ও বন্ধু কুমার সাঙ্গাকারা। যে বন্ধুর সঙ্গে টেস্টে শেষবার ব্যাটকরতে নেমে ১৯তম সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ করলেন। সাঙ্গাকারা এদিন প্রথম আউটহন। তার রান ৫৮। দু বন্ধু মিলে একসঙ্গে ৬,৫৫৪ রান করেছেন। যা সর্বকালেরসেরা জুটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবে যেসব জুটিতে পাঁচ হাজারের বেশি রানহয়েছে, তাদের মধ্যে জয়া-সাঙ্গার মিলিত ব্যাটিং গড় সর্বোচ্চ ৫৬.৫। বন্ধুরসঙ্গে শেষবার ব্যাট করে বিদায় নিলেন সাঙ্গাকারা। টেস্টে বাইশ গজে আর তাদেরদেখা হবে না। তাতে বন্ধুত্বে কোনো আঁচড় পড়বে না। দুজনে ক্রিজের বাইরেওজুটি গড়েছেন ব্যবসায়। কলম্বো শহরে তাদের রেস্তোরাঁ রয়েছে। সেই পার্টনারশিপহয়তো অবিচ্ছেদ্য থাকবে আজীবন।
জয়াবর্ধনেকে হারিয়ে টেস্ট ক্রিকেট নিঃস্বহবে না ঠিকই। তবু আভিজাত্যের একটা অংশ খসে পড়ল কালের গর্তে। একজনঐশ্বর্যমণ্ডিত ব্যটিং-শিল্পী, সজ্জন ব্যক্তি, সতীর্থদের সহমর্মিতারআলিঙ্গনে আগলে রাখা মাহেলা ১৭ বছরের দীর্ঘ পরিভ্রমণের ইতি টানলেন তার প্রিয়ভেন্যু এসএসসিতে। সাঁঝের আগেই পথিক ফিরলো গৃহে। আক্ষেপের রেণু ছড়িয়ে।আরেকটু যাত্রা প্রলম্বিত করলে ক্ষতি কী ছিলো! জয়াবর্ধনে থামার আগেই থেমেপথে-পথে ছড়িয়ে গেলেন দীর্ঘশ্বাসের সুরভি!শ্রীলংকা প্রথম ইনিংস ৩২০ (থারাঙ্গা ৯২, সিলভা ৪১, ম্যাথিউস ৩৯। জুনায়েদ ৫/৮৭, ওয়াহাব রিয়াজ ৩/৮৮)।পাকিস্তানপ্রথম ইনিংস ৩৩২ (মনজুর ২৩, শেহজাদ ৫৮, আজহার ৩২, আসাদ ৪২, সরফরাজ ১০৩।হেরাথ ৯/১২৭)