গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদ :চুয়াডাঙ্গায় শান্তিপূর্ণ হলেও ঝিনাইদহে কালোপতাকায় আগুন

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই হাতে কালো পতাকাব্যানার, বুকে কালো ব্যাজ ও মাথায় কালো কাপড় নিয়ে ২০ দলীয় জোট রাজপথে

 

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের বর্বর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে কালোপতাকা নিয়ে মৌন মিছিল করেছে ২০ দলীয় জোট। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার দিকে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে কালো পতাকা মিছিলশুরু হয়। মিছিলটি মগবাজার চার রাস্তার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলের আশেপাশেব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেলেও কোনো বাধা দেয়নি তারা। এদিকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহেও অভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

মিছিলে উপস্থিতছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ীকমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, স্থায়ী কমিটির সদস্য ওঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাশামসুজ্জামান দুদু, এনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম, বর্তমান সদস্য সচিবহাবিব উন নবী খান সোহেল, কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিরমহাসচিব মোস্তফা জামান হায়দার প্রমুখ।

মিছিল শুরুর আগে সমাবেশে বিএনপিরভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলিবাহিনীর হামলা বন্ধের দাবি জানান। পাশাপাশি অধিকৃত এলাকা ছেড়ে দিয়েফিলিস্তিনিদের বাসস্থানে ফিরতে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গাজায় নিরীহনারী ও শিশুসহ প্রায় দু হাজার মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরাষ্ট্র ইসরায়েল। আজ আমরা আহ্বান জানাবো, অবিলম্বে ওই হত্যাযজ্ঞ আপনারাবন্ধ করুন। দখল করা জমি ও বাড়ি ফিরিয়ে দিন। আমরা ওই নৃশংস হত্যাযজ্ঞেরতীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে ঘোষণা করছি, আগ্রাসনের শিকারফিলিস্তিনের নিরীহ মুসলমানদের পাশে আমরা আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ। তিনি আরওবলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের পক্ষে রয়েছে। এটা আমরা বিশ্বকে জানাতেচাই।
২০ দলীয় জোট আয়োজিত কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদেরব্যাপক শোডাউন লক্ষ্য করা গেছে। শনিবার দুপুর থেকেই ঢাকা মহানগরের বিভিন্নওয়ার্ড ও থানা থেকে বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দল এবং তাদের ছাত্র ও অঙ্গসংগঠনেরনেতাকর্মীরা নয়াপল্টন এলাকায় জড়ো হতে থাকে। কর্মসূচি শুরুর আগ মুহূর্তেনেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে নয়াপল্টন এলাকা। কাকরাইলের বিজয় নগরমোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত নয়াপল্টনকেন্দ্রিক সড়কগুলো নেতাকর্মীতে ভরেযায়।এদিকে কালো পতাকা মিছিলকে ঘিরে শনিবার সকাল থেকেই নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়।এরআগে রাজধানীতে লাঠিসোঁটা বহনে নিষেধাজ্ঞাসহ কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে বিএনপিকেকালো পতাকা মিছিল করার অনুমতি দেয় পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, বিএনপি ঢাকায় কালো পতাকা মিছিলকরার অনুমতি চেয়ে যে আবেদন করেছিল তা মঞ্জুর করা হয়েছে। তবে বিএনপি নেতারাজানিয়েছেন, অনুমতি দেয়া হলেও মিছিলে লাঠিসোঁটা বহন নিষিদ্ধ ও সন্ধ্যা সাড়ে৬টার আগে মিছিল শেষ করাসহ পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েকটি শর্ত দেয়া হয়েছে।গতবছরের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশের পর সরকারের পক্ষ থেকেঢাকার রাজপথে একমাসের জন্য সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকেনয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখের সড়কসহ ঢাকার রাজপথে কোথাওসভা-সমাবেশ-মিছিল করতে পারেনি বিএনপি। দীর্ঘ প্রায় ১৫ মাস পর রাজপথে শনিবারএই কর্মসূচি পালন করছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইল কর্তৃক গণহত্যার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলা ২০ দলীয় ঐক্যজোটের উদ্যোগে কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের নেতৃত্বে কালো পতাকা মিছিলটি পান্না সিনেমা হলের সামনে থেকে বেলা ১১টার দিকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় পান্না সিনেমা হলের সামনে সংক্ষিপ্ত সামাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির ১নং যুগ্মআহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু, যুগ্মআহ্বায়ক খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা, মজিবুল হক মালিক মজু, জেলা জামায়তের আমির আনারুল ইসলাম মালিক, জেলা বিজেপির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিউল আলম, যুগ্মআহ্বায়ক লাল মোহাম্মদ বিশ্বাস, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সরদার আলী হোসেন, রউফুন নাহার রীনা, এম জেনারেল ইসলাম, আবু আলা সামসুজ্জামান, আবু বক্কর সিদ্দিক আবু, উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. শাহাজাহান মুকুল, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি রুহুল আমীনসহ জেলা ও উপজেলা বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে,গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের হামলা ও নির্বিচারে গণহত্যার প্রতিবাদে শনিবার ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের পুরাতন ডিসিকোর্ট চত্বর থেকে কালো পতাকা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে। এর আগে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে পুরাতন ডিসিকোর্ট চত্বরে আসার সময় আওয়ামীলীগ অফিসের সামনে যুবলীগের হামলার সম্মুখিন হয়। এসময় বিএনপি কর্মীদের কাছ থেকে কালো পতাকা নিয়ে যুবলীগ কর্মীরা পুড়িয়ে ফেলে। বিএনপি অভিযোগ করেছে যুবলীগের কর্মীরা ইসরাইল বিরোধী মিছিল পণ্ড করতে তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালায়। পুলিশি হস্তক্ষেপে পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরিস্থিতি শান্ত হলে বিএনপির মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় পোস্ট অফিস মোড়ে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক। সমাবেশ প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি মো. মসিউর রহমান। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে জাহিদুজ্জামানান মনা,মুন্সি কামাল আজাদ পান্নু,আব্দুল মজিদ বিশ্বাস ও আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা বক্তৃতা করেন। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মসিউর রহমান বলেন,ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজায় যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তা ক্ষমার অযোগ্য। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানোর জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। বিএনপির অন্যান্য নেতারা ইসরাইল বিরোধী মিছিলে যুবলীগের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন,আওয়ামীলীগ হচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরাইলের দোসর। এই জন্যই তারা বিএনপির মিছিলে হামলা চালিয়ে কালো পতাকা পুড়িয়ে দেয়।