স্টাফ রিপোর্টার: আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধানতম কবি শামসুর রাহমানের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকীআজ। তিনি ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবরঢাকার মাহুতটুলিতে নানা বাড়িতে কবির জন্ম। তার পৈত্রিক বাড়ি নরসিংদী জেলাররায়পুরায় পাড়াতলী গ্রামে। জীবিতকালে তিনি দু বাংলায় সমান জনপ্রিয়তা অর্জনকরেন। তাকে একজন নাগরিক কবিও বলা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপরতার লেখা দুটি কবিতা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। শামসুর রাহমানকে বিংশশতাব্দীর তিরিশের দশকে ৫ মহান কবির পর আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধান পুরুষহিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কবি শামসুর রাহমান ১৯৫৭ সালে দৈনিক মর্নিংনিউজ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখান কিছুদিন কাজ করারপর ১৯৫৭ সালেই তিনি রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে যোগ দেন।সেখানে তিনি ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালে তিনি পুনরায়মর্নিং নিউজে ফিরে আসেন এবং ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মর্নিং নিউজের সহযোগীসম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৬৪ সালের শেষের দিকে কবিশামসুর রাহমান দৈনিক পাকিস্তানের সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। সেখানে তিনি১৯৭৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এইপত্রিকা দৈনিক বাংলা নামে প্রকাশিত হয়। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কবিদৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে সামরিকসরকারের শাসনামলে তিনি দৈনিক বাংলা থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি সাহিত্যপত্রিকা অধুনা’র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৪৯ সালেসোনার বাংলা পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। কবি শামসুর রাহমানবিভিন্ন পত্রিকায় সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় লেখায় নিজের ছদ্মনাম হিসেবেসিন্দবাদ, চক্ষুষ্মান, লিপিকার, নেপথ্যে, জনান্তিকে, মৈনাক ব্যবহার করেন।তিনি একজন প্রতিবাদী কবি হিসেবে পরিচিত। তত্কালীন সরকারি পত্রিকায় কাজ করাসত্ত্বেও তিনি আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের প্রতি বিদ্রুপ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমানের কারা ভোগের সময় তাকে উদ্দেশ্য করে তিনি কবিতা লিখেছেন।রবীন্দ্র সঙ্গীতের ওপর পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ জানান।
তারলেখা ‘বর্ণমালা, আমার দুখিনী বর্ণমালা’, ‘আসাদের শার্ট’, ‘তুমি’’‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’-এসব কবিতার মধ্যে তার বিদ্রোহীচেতনার বহির্প্রকাশ ঘটে। ১৯৮৭ সালে স্বৈরশাসন আমলে পরপর ৪ বছর ধরে কবিশামসুর রাহমান ‘শৃঙ্খল মুক্তির কবিতা’, ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা,’‘সামপ্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা’এবং ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতা’লিখেন।স্বৈরশাসনের পতন হলে তিনি লিখেন ‘গণতন্ত্রের পক্ষে কবিতা’। তার প্রকাশিতপ্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’১৯৬০ সালে প্রকাশিতহয়। কাব্য, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিশুতোষ গ্রন্থসহ তার রচিত শতাধিক বই রয়েছে।
সাহিত্যেঅনন্য অবদানের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক, নাসির উদ্দন স্বর্ণপদক, জীবনানন্দ পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমেদস্মৃতি পুরস্কার, সাংবাদিকতার জন্য মিতসুবিশি পুরস্কার, স্বাধীনতা পদক ওআনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবংরবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কবিকে সম্মান সূচক ডি লিট উপাধিদেয়া হয়।কবির ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় কবিতা পরিষদ, শামসুররাহমান স্মৃতি পরিষদ ও পরিবারের পক্ষ থেকে আজ সকাল ১১টায় বনানী কবরস্থানেকবির কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এছাড়া দিনভর রাজধানীতে সাংস্কৃতিকঅনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।