স্টাফ রিপোর্টার: ডু ইউ লাভ মি?কয়েক হাজার মাইল দূরের দেশ থেকে এমনআহ্বান পেয়ে ভাবনায় পড়েন মিশেল লুইস নলিন। ইয়েস নো কিছুই জানাননি তিনি।মাহমুদ কিছুটা চিন্তিত। দুদিন পর নলিন জানান, আই অ্যাম ইন্টারেস্টেড। আইলাভ ইউ…। সেই থেকেই শুরু আইরিশ মেয়ে নলিন ও বাংলাদেশি ছেলে মাহমুদেরভালোবাসার গল্প।
সত্যি ভালোবাসা সীমানা চেনে না। মানে না কোনো বাধা।পাসপোর্ট-ভিসার জটিলতা ডিঙিয়ে ভালোবাসাই পারে যুগল মিলন ঘটাতে। মিশেল লুইসনলিন ও রফিক মাহমুদ তাই প্রমাণ করেছেন। সম্পর্কের শুরু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে। অতঃপর ভালোবাসার টানে সুদূর আয়ারল্যান্ড থেকে নলিন ছুটেএসেছেন বাংলাদেশে। বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন প্রেমিকের সাথে। গতকাল বিকেলেরফিক মাহমুদের রাজধানীর আহমদবাগের বাসায় কথা বলেন নবদম্পতি। গল্পচ্ছলে তারাপ্রকাশ করেন তাদের ভালোবাসা-ভালোলাগার কথা। গত বছরের ভালোবাসা দিবসে নলিনকেফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান মাহমুদ। নলিন তা গ্রহণ করেন। ওইদিন থেকেই মাহমুদেরঅল্পসংখ্যক বন্ধু তালিকায় স্থান করে নেন নলিন। কথা হয় নানা বিষয়ে। চ্যাটকরতে গিয়ে পরস্পরকে জেনে নেন তারা। অবশ্য ফেসবুকের বন্ধু তালিকায় যোগ হওয়ারআগেই নলিনের গল্প শুনেছেন মাহমুদ। উত্তর আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা নলিন কাজকরেন একটি রেস্টুরেন্টে। সেলস অ্যাসিসট্যান্ট। তার পাশের একটি রেস্টুরেন্টেকাজ করতেন মাহমুদের বন্ধু সঞ্জু আলম। সঞ্জুর কাছেই নলিনের গল্প শুনেছেনমাহমুদ। নলিন খুব ভালো মেয়ে। উদার মানসিকতার। অন্য আট-দশটা মেয়ের চেয়েসম্পূর্ণ ভিন্ন। আকাশচুম্বী চাহিদা নেই তার। সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত এমেয়েটা আপাদমস্তক একজন ভালোমানুষ। বউ হিসেবে এরকম মেয়ে পাওয়া সৌভাগ্যেরব্যাপার বটে। এরকম নানা কথা। বন্ধুর মুখে প্রশংসা শুনেই নলিনকে ফ্রেন্ডরিকোয়েস্ট পাঠান মাহমুদ। ‘সঞ্জুকে চিনেন’ চ্যাট শুরুর প্রথমেই জানতেচেয়েছিলেন তিনি। নলিন বলেছিলেন ‘কেন চিনব না, সে আমার বন্ধু।’ এভাবেই প্রথমকথোপকোথন হয়েছিলো তাদের। চ্যাটের কোনো নির্ধারিত সময় ছিলো না। কাজের ফাঁকে, অবসরে, ঘুমানোর আগে চ্যাট হতো দুজনের। কথা হতো নানা বিষয়ে। ফ্রেন্ডলিস্টেযোগ হওয়ার সাতদিন পরেই মাহমুদ জানতে চেয়েছিলেন, ডু ইউ ইন্টারেস্টেড টু মেইকফ্রেন্ডশিপ উইথ মি?নলিন স্বভাবিকভাবেই জানিয়েছিলেন, ইয়েস আই অ্যামইন্টারেস্টেড। কিন্তু তখনও বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো জানতেন না মিশেল লুইসনলিন। মাহমুদ জানতে চেয়েছিলেন, ডু ইউ হ্যাভ আইডিয়া এব্যাউট বাংলাদেশ?নলিনজানিয়েছিলেন, আই ডোন্ট নো আইডিয়া। বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানালে নলিনজানিয়েছিলেন, এ বিষয়েও তার কোনো আগ্রহ নেই।
তবে বাংলাদেশি যুবকেরবন্ধুত্বে নলিন ক্রমাগত মুগ্ধ হন। তাদের বন্ধুত্বের পালে তখন অন্যরকমহাওয়া। শিহরিত হচ্ছেন দুজনেই। পরস্পরের সুখ-দুঃখগুলো যেন ভাগ করে নেনতারা। কোনো সুসংবাদ মাহমুদকে না জানালে ঘুম হারাম নলিনের। সবার আগে মাহমুদকেজানানো চাই। অভিন্ন অবস্থা মাহমুদের। অতঃপর এক শুভক্ষণে মাহমুদ প্রকাশকরলেন না বলা কথাটি। জানতে চাইলেন, ডু ইউ লাভ মি? কিন্তু হতাশায় পড়ে গেলেনমাহমুদ। ওই প্রান্ত থেকে ইয়েস নো কিছুই জানাননি নলিন। মাহমুদ চিন্তিত। অনেকভাবনার পর সিদ্ধান্ত নেন নলিন। দু’দিন পর তিনি বলেন, আই এ্যামইন্টারেস্টেড। আই লাভ ইউ মাহমুদ।তারপর থেকে ম্যাসেঞ্জার হোয়াটসঅ্যাপে ওস্কাইপে কথা হতো দুজনের। স্কাইপে সম্পর্কে ধারণা ছিল না নলিনের। অনলাইনেমাহমুদ তাকে শিখিয়ে দেন তা কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। গত বছরের মে মাস থেকেইস্কাইপে কথা শুরু দুজনের। এরই মধ্যে মাহমুদের সঙ্গে কথা হয়েছে নলিনের বড়ভাই নিল মাসালের। মাসাল এবং মাহমুদ দু’জনের জন্ম তারিখ অভিন্ন। ১১ই এপ্রিল।এ নিয়েই কথা। নলিনের দুই ভাই। দুই ভাইয়ের একমাত্র ছোট বোন তিনি।
গতকালমাহমুদের সঙ্গে কথা বলার সময় নলিন নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, রিয়েলি ইট’স এ নাইস কান্ট্রি। আই এনজয় ইট। তিনি তার বর মাহমুদ সম্পর্কেবলেন, মাহমুদ ইজ এ গুড বয়। নট কমপেয়ার। মিশেল লুইস নলিনের বাংলাদেশে আসারপ্রেক্ষাপট সম্পর্কে মাহমুদ জানান, বিদেশে যাওয়ার কোন ইচ্ছে মাহমুদের কখনওছিলো না। এমনকি নলিনের সঙ্গে প্রেম করার পেছনেও এরকম কোন উদ্দেশ্য ছিল না।নলিনের প্রতি অল্প সময়েই মুগ্ধ হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা পরস্পরকেভালোবেসেছি। এ থেকেই নলিন আমাকে বৃটেন যেতে উৎসাহিত করে। আমার খুব ইচ্ছে হয়তার কাছে ছুটে যাই। হৃদয়ের এই টান থেকেই বৃটেনের ভিসার জন্য আবেদন করেনমাহমুদ। স্পন্সর নলিন। কিন্তু নিয়ম-নীতির কারণ দেখিয়ে ভিসা দেয়নি বৃটেনকর্তৃপক্ষ। ভিসা না হওয়া প্রসঙ্গে মাহমুদ জানান, ভিসা না দেয়ার পেছনে একটিকারণ ছিল যে, অনলাইন মাধ্যম ছাড়া বাস্তবে নলিনের সঙ্গে তার দেখা হয়নি।এছাড়া ব্যাংকে লেনদেন পর্যাপ্ত না দেখাতে পারাও একটি কারণ।
মাহমুদ ভিসাপাননি- জেনে কান্নাকাটি করেন নলিন। প্রিয় মানুষের সঙ্গে দেখা হবে এপ্রত্যাশায় ছিলেন তিনি। তবে হতাশায় ভেঙে পড়ার মতো মেয়ে তিনি নন। মাহমুদেরমতে, নলিন সবসময় সব বিষয়কে পজিটিভ দেখেন। চিন্তা করেন। এমনকি তার কাজও থাকেপজিটিভ। নলিন ওই সময়েই জানিয়ে দিলেন, মাহমুদকে যেতে হবে না। তিনি আসবেনমাহমুদের কাছে। বাংলাদেশে এসেই বিয়ে করবেন তিনি। যেই কথা সেই কাজ। গত ৩রাআগস্ট বাংলাদেশে আসেন নলিন। বিমানবন্দরেই তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন মাহমুদ।উঠেন মাহমুদের বাসায়। ৫ই আগস্ট আদালতের মাধমে বিয়ে করেন তারা। গতবৃহস্পতিবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে রাজধানীর মগবাজারের একটিরেস্টুরেন্টে। ভিন্ন দেশের, ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠা এ যুগলের মিলনেসবচেয়ে বেশি সহযোগিতা ছিল মাহমুদের ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীর হায়দার নিপুর।মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রফিক মাহমুদ গুলশানের এমকে ইলেকট্রনিক্সেরকর্মকর্তা। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। মাহমুদের পিতা জানান, তাদেরবাসায় এসি নেই। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে নলিনের শরীরে ফোসকা পড়েছে। তবুমেয়েটি মানিয়ে নিয়েছে। মাহমুদের মা-বাবার সঙ্গে ইশারা-ইঙ্গিতেই কথা হয়এলিনের। অবশ্য দোভাষীর কাজ করে দেন মাহমুদ। নলিন জানান, তিনি এ দেশে এসেঅবাক হয়েছেন। প্রথমেই রাস্তায় কুকুর দেখেছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন, হোয়াইডগস আর অন দ্যা রোড? কুকুরতো থাকবে বাসায়। এখানেই শেষ না। নলিনের চোখ দিয়েজল গড়িয়ে পড়েছে যখন খিলগাঁও এলাকায় তিনি দেখেছেন, রাস্তায় থাকছে মানুষ।নলিন বলেন, আমি ভাবতে পারিনি। এখানে মানুষ এতো কষ্টে আছে। তবে এ দেশেরমানুষ অনেক ভালো বলেই মনে করেন তিনি। নলিন জানান, ২৩শে আগস্ট পর্যন্তবাংলাদেশে থাকবেন তিনি। পরে বৃটেন গিয়ে মাহমুদকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্যকাজ শুরু করবেন। তার বিশ্বাস তারা একসঙ্গেই থাকবেন আজীবন।