গুরুত্ব অনুধাবনে উদাসীনতা অনিবার্য করে বিপর্যয়

 

 

আদালত গারদের গরাদ কারত দিয়ে কেটে পালানো হাজতি শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েছে। তার পালানোর কারণে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক চাকরিচ্যুত পুলিশের ৪ সদস্য তাকে ধরতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ধরা পড়ার পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন বলেছে, ঝিনাইদহের এক নারী তাকে রড কাটার ব্লেডটি জেলহাজতে সরবরাহ করে। হাজতি এক বড় ভাইয়ের সাহসে সে আদালত হাজতখানার রড কাটে। একদিনে সে হাজতখানার বায়ুনিষ্কাশন রডটি কাটেনি। আদালতে হাজিরা দিতে তাকে যেদিনই নেয়া হয়েছে আদালতের হাজতখানায়, সেদিনই সে রডটি কাটে। রড কেটে পালিয়ে সে সোজা যায় স্টেশনে। ট্রেনযোগে পৌঁছে যায় কুষ্টিয়ার পোড়াদহে। এক মামার বাড়ি ওঠে। অটো চালিয়ে দিব্যি ছিলো সে।

হাজতি শাহীন একটি চুরি ও হত্যা অপচেষ্টা মামলার আসামি। তুলনায় অনেক বড় বড় মামলার বাঘা বাঘা আসামি চুয়াডাঙ্গা জেলহাজতে রয়েছে। তাদেরকেও ধার্যদিনে আদালতে হাজির করানো হয়। রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, হাজতের রড চিকন নয়। কাটাও বেশ কঠিন। দীর্ঘদিন ধরে টুক টুক করে রড কেটে হাজত থেকে পালানোর পরই কর্তব্যরত পুলিশ নড়ে চড়ে বসে। ফুটে ওঠে দায়িত্ব পালনে কতোটা উদাসীন, তার আংশিক চিত্র।

সাময়িক চাকরিচ্যূত হওয়ার পর পালানো হাজতিকে ধরতেও বেশ দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন তারা। শাহীন পালানোর কাজে ছোটবেলা থেকেই অভ্যস্ত। তার মায়ের বরাত দিয়ে ইতোমধ্যেই পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, শিশুকালে পিতা হারানো শাহীন বেড়ে ওঠে তার এক ফুফুর বাড়ি। রাখা হয় সরকারি শিশুসদনে। সেখান থেকে সে কয়েক দফা পালিয়ে আত্মগোপন করে। বড় হয়ে পথে পথে ঘুরতে গিয়েই সে নেশাগ্রস্তই শুধু হয়ে পড়ে না, চুরিতে পাকিয়ে নেয় হাত। চুরি করতে গিয়েই ধরা পড়ে সে।

চুরি ও হত্যা অপচেষ্টা মামলার হাজতি শাহীনের পালানোর মধ্যদিয়ে যে দুটি বিষয় ফুটে উঠেছে তা হলো, জেলহাজত ও আদালত হাজতখানার নিরাপত্তাহীনতা। শাহীন পালিয়ে ছিলো আদালত হাজতখানা থেকে। চুয়াডাঙ্গা জেলহাজত থেকেও আসামি পালানোর উদাহরণ রয়েছে। হাজত থেকে পালানো ৪ জন দাগীর মধ্যে দুজন ক্রসফায়ারে ঝরেছে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজন ধরা পড়েছে। এখনও পলাতক রয়েছে সোহাগ নামের এক দাগী। তাকে এখনও ধরা সম্ভব হয়নি। হাজত ও আদালত হাজত থেকে আসামি পালানোর ঘটনাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যায় না। হাজতখানাগুলোর নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিতদের যে আরও কর্তব্যপরায়ন করা দরকার, তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। চুয়াডাঙ্গা জেলহাজতে আসামির কাছে রড কাটার ব্লেড সরবরাহ করা হলো অথচ হাজতের প্রহরীদের কেউ টেরই পেলেন না। অথচ চুয়াডাঙ্গা জেলহাজতে খাবার দিতে হলেও কঠোর বিধি অনুসরণ করতে হয়। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তা কিনতে হয় কারাগার সংলগ্ন দোকান থেকে। তা হলে ব্লেড সরবরাহের সুযোগ নিলেন কীভাবে?

আসামি পালানো রুখতে হবে। হাজত পালানোর কাজে সহযোগীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। দরকার কর্তব্যে অবহেলার নেপথ্য খুঁজে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। সমস্যার মূল শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে না পারলে সমস্যা থেকেই যায়। হাজত থেকে আসামি পালানো ঘটনাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া জরুরি। যেহেতু আসামিদের অনেকেই পালানোর সুযোগ খোঁজে, সেহেতু পালানোর পথ রুখতে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিতদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপত্তা ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়টি ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, চুয়াডাঙ্গা এক সময় যাদের কারণে রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে কলঙ্কিত হয়, তাদের অনেকেই জেলহাজতে। গুরুত্ব অনুধাবনে উদাসীনতা অনিবার্য করে বিপর্যয়।