দামুড়হুদা সীমান্ত দিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে বছরে ৫শকোটি টাকা পাচার হচ্ছে ভারতে

 

 

বিপুল পরিমা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার :মাথা ব্যথা নেই প্রশাসনের

স্টাফ রিপোর্টার:দামুড়হুদা উপজেলায় অর্ধশতাধিক হুন্ডি ব্যবসায়ী প্রশাসনের চোঁখকে ফাকি দিয়ে হুন্ডি ব্যবসায় মেতে উঠেছে। এসব হুন্ডি ব্যবসায়ীরা অন্যান্য ব্যবসার আড়ালে নির্বিঘ্নেহুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ভারতে থেকে অবৈধ পথে আমদানিকৃত মালামালের কোটি কোটি টাকা প্রতিদিন হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পাচার করছে। যার ফলে একদিকে সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট বছরের পর বছর হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে এলেও থানা পুলিশের খাতায় কোনো হুন্ডি ব্যবসায়ীর নাম নেই এবং দেশের অর্থনৈতিক মেরূদণ্ড ধ্বংসকারী হুন্ডি ব্যবসা বন্ধের ব্যাপারে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ নেই। প্রশাসনের দূর্বল অভিযানের কারণে মাঝে মধ্যে দু-একজন ধরা পড়লেও মূল গড ফাদাররা থাকেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

কার্পাসডাঙ্গা শুল্ক (ভ্যাট) কর্মকর্তা খায়রুল বাসারের দেয়া তথ্য মতে, চলতি বছরের পয়লা জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টগুলো দিয়ে ভারত থেকে আসা ৪৬ হাজার ৬৩টি গরু, ৩ হাজার ৯৬৬টি মহিষ, ৫২টি ঘোড়া ও ৮টি ছাগল মোট ৫০ হাজার ৮৯টি পশুর করিডোর করা হয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকার একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মুন্সীপুর, ঠাকুরপুর, জগন্নাথপুর ও বাড়াদি সীমন্ত দিয়ে প্রতিদিন যে পরিমান গরু এবং মোষ অবৈধ পথে ভারত থেকে সীমান্তের তারকাঁটা পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তার শতকারা ৬০ ভাগ পরিমাণ গরু ও মহিষের করিডোর করা হয় আর বাকি ৪০ ভাগ গরু করিডোর ছাড়াই দেশের বিভিন্ন যায়গায় চয়ে যায়। এ হিসেবে উপজেলার ৪টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭শ’ গরু ও মোষ ভারত থেকে এদেশে আসছে। গড়ে প্রতিটি গরু ও মোষের মূল্য ২০ হাজার টাকা করে হলে ৭শ’ গরুর দাম হয় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সে হিসেবে প্রতিদিন ১ কোটি ৪০ লাখ এবং বছরে ৫শ’ ১১ কোটি টাকা, যা ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীদেরকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ টাকা তারকাঁটা পেরিয়ে নদগ পরিশোধ করছে আর বাকি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে।

বিশ্বস্ত এক সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আকুন্দবাড়িয়া গ্রামের নতুনপাড়ার মৃত দোসর মণ্ডলের ছেলে আইনাল হকের নেতৃত্বে অর্ধশত হুন্ডি ব্যবসায়ীর শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এসব হুন্ডি ব্যবসায়ীরা চোরাকারবারিদের অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পাচারের জন্য সমস্ত খরচ বাদে প্রতি লাখে ৫শ’ টাকা কমিশন পাই।

সূত্র মতে, চোরাকারবারীরা ভারত থেকে এসব গরু বাকিতে কিনে আনে। পরে তারা কেনা গরুর মূল্য পরিশোধের জন্য হুন্ডি ব্যবসায়ীর কাছে টাকা জমা দেয়। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ২৫ শতাংশ টাকা রাতের আধারে তারকাঁটা পেরিয়ে ভারতীয় মহাজনদেরকে নগদ পরিশোধ করে এবং ২৫ ভাগ টাকা মোবাইল ব্যাংকিং ও ৫০ ভাগ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা প্রতি লাখে ৫শ’ টাকা কমিশন নিয়ে দর্শনা ও চুয়াডাঙ্গার বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে নির্দিষ্ট হিসাব নম্বরে অবশিষ্ট ৫০ ভাগ টাকা পাঠিয়ে দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গরু চোরাচালানীরা জানান, ভারতের নদীয়া জেলার প্রভাবশালী হুন্ডি ব্যবসায়ী খাটুরায় গ্রামের রনজিৎ কুমার, অভিজিত, সুনা, পেপুলবাড়িয়া গ্রামের বলাই, নালুপুর গ্রামের ছলে, ওমারপুর গ্রামের জামির, পুটিখালী গ্রামের ওয়াসিম ও ভাজনঘাট গ্রামের হাতেম আলীর সাথে বাংলাদেশের হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে।

এ ব্যপারে এলাকার সচেতন মহল জরুরি ভিত্তিতে উপজেলার অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থ গ্রহনের জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানিয়েছে।