চুয়াডাঙ্গায় ডায়রিয়ার প্রকোপ অনেকটাই কমেছে : কলপাড়ে ভিড়

 

 

বিশুদ্ধ পানির জন্য অনেকেই ছুটছেন দিগবিদিক

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় পানির জন্য হন্যে হয়ে ছুটছেন। দূর দূরান্ত থেকে টিউবওয়েলের পানি সংগ্রহ করতে অনেকের নাভিশ্বাস উঠছে। আক্রান্ত এলাকার অনেকেই পৌর সরবরাহকৃত পানি দিয়ে কুলিও করতে ভয় পাচ্ছেন। অনেকেই এ মন্তব্য করে বলেছেন, অগত্যা গোসলটা করতেই হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গতরাত ১১টা পর্যন্ত ৬৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রয়েছেন যারা পূর্বেও ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া রোগীর মধ্যে প্রায় অর্ধেক বিভিন্ন গ্রামের। তারা কেন ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছেন? বিশুদ্ধ পানি পানের পরও পৌর এলাকার বেশ কয়েকজন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। কেন এমনটি হচ্ছে? এসব প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ঢাকা মহাখালীর রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মেডিকেল অফিসার সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক ডা. মু. মুশতাক হোসেন বলেছেন, জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে। জীবাণু যে কোনোভাবেই পাকস্থলিতে প্রবেশ করছে বলেই ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি বা বিশুদ্ধ খাবার খেলেই তো হবে না। যে পাত্রে খাওয়া হচ্ছে তা জীবাণুমুক্ত কি না তাও তো দেখতে হবে। বিশুদ্ধ পানি বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ধোয়া পাত্রে যেমন রাখতে হবে তেমনই পরিষ্কার পাত্রের মাধ্যমেই পান করতে হবে। বাসি-পচা খাবার পরিহার করতে হবে। মল ত্যাগের পরে এ খাবারের আগে শাবান দিয়ে ভালো করে দু হাত ধুতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বাগানপাড়া, জিনতলাপাড়া, পুরাতনপাড়া মসজিদপাড়া, পোস্ট অফিসপাড়া, আরামপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভয়াবহ আকারে ডায়রিয়ার প্রাদুভাব দেখা দেয়। ঢাকা থেকে দুটি মেডিকেল টিম আসে। স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালকসহ খুলনা বিভাগীয় পরিচালকও পরিস্থিতি পরিদর্শনে চুয়াডাঙ্গায় হাজির হন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ পৌর সরবরাহকৃত পানি পরীক্ষা করে। পৌর সরবরাহকৃত পানির উৎসস্থলে জীবাণু না পাওয়া গেলেও গ্রাহকদের বাড়ির বাড়ি এবং পাবলিক ট্যাপ থেকে সংগ্রহকৃত পানিতে পাওয়া গেছে জীবাণু। গত ১ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ১২শ পার। গত দু দিন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করলেও পৌর এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল চুয়াডাঙ্গা বাগানপাড়ার সোমা মণ্ডল ও মসজিদপাড়ার মোজাম আলীর বাড়ির উঠোনে দুটি টিউবওয়েল স্থাপনে সহযোগিতা করেছে। এ টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মহল্লার নারী-পুরুষ ভিড় জমাচ্ছেন। দূর থেকেই ভ্যানযোগে পানির ঘড়া নিয়ে ছুটতে দেখা গেছে অনেকের।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কয়েকটি মহল্লার বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা বলেছেন, ট্যাপের পানি? ভুল করেও কেউ মুখে দিচ্ছে না। পান করা তো দূরের কথা কুলি করতেও কেউ সাহস পাচ্ছে না। অনেকেই রয়েছেন যারা ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েও হাসপাতালমুখো না হয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। গতকাল মাঝেরপাড়াসহ বেশ কয়েকটি মহল্লায় খোঁজ নিয়ে এরকম একাধিক রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করে ও রোগীর ইস্টুল সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারে প্রেরণ করলেও গতকাল পর্যন্ত তার রিপোর্ট চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছেনি। আজ রোববার রিপোর্ট পাওয়া যেতে পারে।